নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে-র সোনা বাবুর জন্মদিন আজ

দেশভাগের স্বাধীনতা ও অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় তমাল সাহা

ঋতুকাল বিষন্ন হয়ে গেলে হেমন্ত আসে। সেই হেমন্তে তো তুমিও জন্মেছিলে। এক মহাকাব্যিক বিষাদ তখনই জড়ো হতে ছিল বুঝি তোমার বুকের অতলান্ত গভীরে।

যখন আমার বোধ ছুঁতে চাইছে এই দেশ প্রকৃতি রাজনীতি তখন তুমি আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলে, স্বাধীনতা শব্দটির বানান এবং উচ্চারণ খুব সহজ নয় আর তার অভিব্যক্তির জাগরণ আরো কঠিন কঠিনতর।

স্বাধীনতা পেলে একটি অখণ্ড মানচিত্র দুভাগ হয়ে যায়। মাটিতে সীমান্ত রেখা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া বসাতে হয়। ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে হয় মানুষকে। তাকে কি স্বাধীনতা বলা যায়? সে তো দেশভাগের যন্ত্রণা তখন তো নীলকন্ঠ পাখিরা উড়ে চলে যাবেই।

আকাশের গভীরে নীলে সমুদ্রের অতল নীলে পাহাড়ের নীল চূড়ায় সেই পাখি, হৃদয়ের অবুঝ নীল বেদনায় যে পাখি সেই তো নীলকন্ঠ পাখি! জন্মভূমি দ্বিখন্ডিত হলে তার চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায় কারা? ক্ষমতার জন্য কারা দেশ ভাগ চায়? তুমি বলেছিলে, ধর্মবিদ্বেষ সাম্প্রদায়িকতা একটা মারাত্মক ব্যাধি, একটা কঠিন রোগ, একটা বড় অসুখ– এর কোন নিরাময় নেই। এর কোন ঔষধি চিকিৎসাশাস্ত্রে নেই।

দেশ ভাগ মুছে দেয় শৈশবের আল পথ, যৌবনের শস্য খেত। সংসার বাড়ি হাঁড়ি পাতিল কলসি ভাঙতে থাকে। পড়শিরা দূরে সরে যেতে থাকে। সামসুদ্দিনেরা হয়ে যায় লীগের নেতা। ঢাকার রায়টে খুন হয়ে গেলে মালতী বিধবা হয়ে যায়। হিজল গাছের ডালে জলে ধর্মীয় ইশতেহার। মানুষ আর প্রকৃতির মিশেল দিয়ে তুমি বলো দেশভাগের কথা। ঈশম শেখ, আবেদালি, জালালি জোটন, শচীন্দ্রনাথ, আভারানি, মুশকিল আসান ফকিরেরা বাংলার উঠোনে ঘুরে বেড়ায়।

ছবিঃ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাহিত্যিক সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিম পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানে।

তাহলে স্বাধীনতা? হিজল গাছের ডালে মুসলিম লীগের ইস্তেহার ঝুলিয়ে দিয়েছে সামু। মালতী ছিড়ে ফেলে — ক্যান ছিড়ুম না? দেশটা কি শুধুই তগো? যদি না হয় তবে শুধু শুধু ইসলাম ইসলাম করস ক্যান? ঝোটনের সঙ্গে মুশকিল আসানের সম্পর্ক সকলেই জানে। সোনা বাবুরাও মুশকিল আসানকে মানে। তারা গভীর রাতে মুশকিল আসানের ডাকে জেগে ওঠে। তার মাটির কুপির আলোয় কাজলের ফোঁটা নেয়, মঙ্গল হবে!

ঈসম শেখের কোলেপিঠে মানুষ হলেও সোনাবাবুরা জন্মভিটে ছেড়ে চলে আসে এপারে। তারা জমিদার। গরিব মুসলমান প্রজাদের মুখোমুখি হয় সোনা বাবুরা।

অই দেশে গিয়া খাইবেন কী, করবেন কী না খাইয়া মরলে আমাগো ইজ্জত থাকে?

স্বাধীনতার তোপধ্বনি বেজে উঠল মধ্যরাতে। দেশের বুক বিদীর্ণ করে দু’রঙের পতাকা পত পত করে উঠল কিন্তু কোথায় স্বদেশ সত্য? কোথায় জন্মভূমি সত্য ? কোথায় জীবন সত্য? নীলকন্ঠ পাখির খোঁজ চলতেই থাকলো।

কোথায় গেল তোর ধর্ম? মানুষের পিঠে দাগা পড়ে গেল উদ্বাস্তু শিলমোহর,

শরণার্থীর স্ট্যাম্প পড়ে গেল হাতে।

পড়ে রইলো ওপারে উপরে ঘন সবুজ ভেতরের টকটকে গোলাপি তরমুজের খেত….