অবতক খবর,6 জানুয়ারি: পেটের বড় দায়,আগুন নাড়াচাড়া করে খায়। আমরা বারুদ নিয়ে খেলা করি। যমকে সামনে দাঁড় করিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জ করি। বোমার মশলা রোদে দিয়ে গরম করি।মোমছাল,গন্ধক অনুপাত ঠিকঠাক মেশাই, বলছিল আলিয়া নামের মেয়েটি। এসব আমাদের কাছে জলভাত।

এই গাঁয়ে ৫-৮ হাজার লোক বারুদের খেলাঘরে কাজ করে। বাড়ি বাড়ি ঘরে ঘরে কুটির শিল্প। এটাই এখানকার মা-মাটি-মানুষের গল্প। মৃত্যু আমাদের হাতের তেলোয় নাচে। এসব মাথা নিচু করে বলছিল আসগর আলি। এটা দেবক গ্রামের গল্প।

এই একই গল্প হালিশহর গঙ্গার পার ধরে। হালিশহরের পার্বতী মন্ডল দু’বছর আগে বলেছিল, এই একইকথা আর ভাল লাগেনা। কোন কথা? এইযে বারুদ নিয়ে খেলা করেন, বোমা বাঁধেন, মৃত্যুকে ভয় করে না? আরে, মৃত্যুকে ভয় করব কেন? জীবনে বাঁচার আশা রেখেই তো বোমা বাঁধি। আমার মরণ নাহলে অন্যের মরণ তো দেখি। তাতেও ভয় পাইনা। আবার বারুদের মশলায় মেতে উঠি। আরে পেট। পেট আর পেট। আমার পেটের গল্প শুধু নয়, আমার ছেলের পেট, আমার মেয়ের পেট জড়িয়ে আছে বারুদের সঙ্গে।

৩ জানুয়ারি যে বিস্ফোরণ ঘটল নৈহাটির দেবকে, তাতে হালিশহরের মালঞ্চ পর্যন্ত কেঁপে উঠল। ওদিকে কেঁপে উঠল অদূর কাঁকিনাড়া। কত প্রতিবেশীর দেওয়ালে ফাটল ধরল। নারকেল গাছ মাঝখান দিয়ে ফেটে দু’ভাগ হল। কিন্তু প্রশাসন কাঁপলো কি? তাদের বুকটা ধরফর করে উঠল কি? তাদের মননে চেতনায় ফাটল ধরল কি? ধরবে কেন? এখানে যে শত শত বারুদের কারখানা, তা তো তারা জানেই না।

হালিম শেখকে জিজ্ঞাসা করি,এইখানে কতদিন ধরে এসব কারখানা চলছে? তিনি বলেন, সে তো অনেকদিন থেকে। পুলিশ টহল দেয় না? এখানে পঞ্চায়েত সদস্য নেই? এলাকার খবর রাখেনা? হালিম শেখ ঝটপট উত্তর দেয়, আপনি তো সাংবাদিক! কোন জগতে থাকেন মশাই? আপনি কি এই সব জানেন না বোঝেন না? আমাকে ঘাটিয়ে দোষী বানাতে চান? এইসব চালায় পার্টির লোকজন। পঞ্চায়েতের সদস্যরা। এগুলো তো বেআইনি কারখানা! কি যে বলেন। পার্টি পঞ্চায়েতের লোকেরা তো আইনি। তাদের কারবার আবার বেআইনি হয় নাকি? দিনে কত রোজগার? ১৪০,১৫০, খুব বেশি হলে ১৮০ টাকা। তাতে দিন চলে? এবার রেগে উঠল শেখ সাহেব। আপনি না সাংবাদিক! এ প্রশ্নের কোন মানে আছে? আপনার দিন চলে ১৪০ টাকায়? সরকার তো আইনি। সে ভাত দিতে পারে? পারে না। তবে বেআইনি বাজির কারখানা ভাত দিতে পারে। সেই বেআইনি ভাতই আমরা খাই। এখানকার কারখানা বে-আইনি হলেও আমরা ভাঙতে দেব না। ৫-৭ হাজার মানুষের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাবে। আইন যখন ভাত দিবার পারে না তখন বেআইন-ই আইন।

শোনেন শেখ সাহেব,এতে মৃত্যুর ডাক আছে। শেখ সাহেব বলেন, তা সে যখন তখন হোক, মৃত্যু তো একবারই ডাক দিবার পারে। এভাবে নয়তো অন্যভাবে। বারুদ তো আমাদের ভাত দেয়। সেই বারুদের আগুনে পুড়ে মরলে দোষ কি? এই যে এতো শ্রী প্রকল্প তাতেও জীবন বিশ্রীই থেকে যায়। যারা মরলো তাদের পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ পাবে কি?এখন পুলিশ ফরেনসিক মিনিস্টার জব্বর খেল চলবে কয়েক দিন।

যারা বারুদে- বিস্ফোরণে মরলো তারা বোমাশ্রী হয়ে গেল কি সাংবাদিক মশাই?