দুর্গা রাও ও বাজেট
তমাল সাহা

কবিতার কাছে করেছি সব সমর্পণ। অবসরকালীন যত পেয়েছি মুদ্রার সম্ভার গ্র্যাচুইটি পেনশন। অমৃত কালের প্রথম বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী সীতারামন। কবিতা বসে আছে টেলিভিশনের সামনে। আর্থিক সুবিধা আর কি কি পাওয়া যাবে, শুনছে মন দিয়ে। ব্যাংকের পাসবই তার হাতে। আমার সব অর্থ সামগ্রী সে তুলে নেবে।

কবিতা জানে,আজ দুপুরে ইটভাটায় যাবো। শীতকাল। তাকে বলি, সারা শরীরে নয়, পিঠের দিকে খুব ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগে। কবিতা বলে, তবে তো হয়ে গেল! তুমিও ঝুঁকে গেলে না তো! শিরদাঁড়া বেঁকে গেল নাকি! হাড়ের ডাক্তার দেখাবো? ঝুঁকলে মাটির দিকে ঝুঁকো। কোনদিনও পায়ের দিকে ঝুঁকো নাকো। এসব ঘরোয়া কথা। লেখার এটা গৌরচন্দ্রিকা হলো।

রাণী রাসমণি ঘাট হয়ে চলে এলাম ইটভাটায়।
দুর্গা রাও তখন ভাটি থেকে পাকা ইট মাথায় দশটা করে তুলে আনছে। অত ইট নিয়ে প্রায় দৌড়ে দৌড়ে যে কী করে ভাটার খাদ থেকে উপরে উঠে আসে! শরীরের শ্রম আর হাতের কেরামতি কাজ করে। এই শীতেও কপাল ছুঁয়ে গাল বেয়ে ঘাম ঝরে।

দুপুরের এক ঘন্টা বিরতি। ঝাপড়ানো বটগাছের তলায় বসে সারতে হবে ভাত ডাল উচ্ছে ভাজা পেঁয়াজের টুকরো কাঁচা লঙ্কার খাদ্য।।পাশে বসি আমি। বলি, তোমরা তো মেয়েমানুষ! এমন উচ্চারণ শুনতেই আমার দিকে কটমট করে তাকায়। বলি, সরি! ভুল হয়ে গেছে। তোমরা তো নারী বাজেট শব্দটি শুনেছো? ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়! আর মহিলা সম্মান সেভিংস প্রকল্প। দু লক্ষ টাকা সঞ্চয়ে রাখবে। সাত শতাংশ সুদ পাবে।

দুর্গা লক্ষ লক্ষ টাকার কথা শুনলো। বুঝলো কি কিছু? হয়তো বা বুঝলো।
উত্তরে দুর্গা বলে, উসব বড়লোকি বিপার। মুদের বাঁচাও পকল্পই ভালো। উ যে তুরা বুলিস খয়রাতি ডোল পকল্প– উটাই মুদের ভালো। কুনো ঝুট ঝামেলা লাই। নেতাকে কুছু টাকা দাও। ব্যাস! বাঁচাও পকল্পে নাম উইঠে গেল। তারপর পকল্পের টাকা মিল্যে গিল তো নেতাকে আবার কুছু কুছু টাকা দাও। কুছু নিলে কুছু তো দিতেই হবে। বাজেট ফাজেট– মুদের বুইয়েই গিল!