অবতক খবর,২২ জানুয়ারিঃ দিদির দূত কর্মসূচিতে গিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে বিধায়ক,আবাস যোজনায় ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণের অভিযোগ, এলাকাবাসীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি- হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন তৃণমূল কর্মীরা, সাফাই বিধায়কের, খোঁচা বিজেপির।

মালদা- দিদির দূত কর্মসূচিতে গিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে তৃণমূল বিধায়ক। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণের অভিযোগ তুলে বিধায়কের সামনেই ক্ষোভ প্রকাশ এলাকাবাসীর। ঘরের নাম করে টাকা তোলার অভিযোগ। এলাকাবাসীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি এবং হাতাহাতিতে জড়িয়ে যান তৃণমূল কর্মীরা। পরবর্তীতে নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে কোন রকমে নিয়ন্ত্রণে পরিস্থিতি। ব্যাপক উত্তেজনা এলাকায়।অন্যদিকে কিছু জায়গায় আবার মহিলাদের দাবি তারা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান এবার। বিক্ষোভের ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ বিজেপির। সাফায় তৃণমূলের। তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।রবিবার চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত কুশিদা অঞ্চলে দিদির দূত কর্মসূচিতে যান চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১(বি) ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস, যুব তৃণমূলের সভাপতি শেখর সাহা, কুশিদা অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি মোঃ নুর আজম সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। গড়রা এলাকায় বিধায়ক যেতেই বিক্ষোভ শুরু করে স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বজন-পোষণ হয়েছে।কাটমানির বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে ঘর। এমনকি অনেকে কাটমানি দিয়েও ঘর পাননি। কিন্তু যাদের পাকা বাড়ি তারা ঘর পেয়ে গেছে। তালিকায় অনেকের নাম আসার পরেও নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগ। স্থানীয় পিছিয়ে পড়া মুচি সম্প্রদায়ের লোকেরা মূলত বিক্ষোভ দেখান। তারা বলেন জুতো সেলাই করে আমাদের কোন রকমে সংসার চলে। ভগ্নপ্রায় বাড়ি। কিন্তু তারপরও কেউ আমাদের দিকে দেখছে না। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধক্ষ্যা শোভা দাসের স্বামী তথা তৃণমূল নেতা সুধীর দাসের বিরুদ্ধে ঘর দেওয়ার নাম করে প্রচুর টাকা তোলার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এলাকাবাসীর।বিক্ষোভের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি এমনকি হাতা-হাতিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল কর্মীরা। উপস্থিত স্থানীয় নেতৃত্বরা কোন রকমে পরিস্থিতির সামাল দেন। যদিও বিধায়ক নীহার রঞ্জন ঘোষ বিক্ষোভের ঘটনাকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ। তার পাল্টা অভিযোগ কেন্দ্র সরকার টাকা দিচ্ছে না বলে মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। রাজ্য সরকারের প্রকল্প ঠিকঠাক ভাবে ৯০% এর বেশি মানুষ পাচ্ছে। কুশিদা অঞ্চল সভাপতি তথা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মোহাম্মদ নুর আজম বলেন টাকা নেওয়ার খতিয়ে দেখা হবে।এদিকে সমগ্র ঘটনায় তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ বিজেপির। বিজেপির দাবি বিক্ষোভের সবে শুরু। এরপর তৃণমূল নেতারা গ্রামে ঢুকতে পারবে না। সমগ্র ঘটনা নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।

বিক্ষোভকারী বাসিন্দা রতন রবি দাস বলেন, আমরা মুচি জুতা সেলাই করে সংসার চলে। কিন্তু আমরা ঘর পাইনি। ঘরের জন্য টাকা দিয়েছি তারপরেও ঘর পাইনি।

বিক্ষোভকারী স্থানীয় বাসিন্দা তহিদ আলম বলেন, যাদের পাকা বাড়ি রয়েছে তারা ঘর পেয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কাটমানি দিতে পারিনি তাই ঘর পাইনি। ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে আবাস যোজনায়।

বিক্ষোভকারী স্থানীয় বাসিন্দা গুনীয়া দেবী বলেন, আমরা গরীব। আমাদের মাটির বাড়ি। কিন্তু আমরা ঘর পাচ্ছি না। যারা টাকা দিচ্ছে তারা পাচ্ছে।

বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ বলেন, কেন্দ্র সরকার টাকা দিচ্ছে না। তাই কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। রাজ্যের প্রকল্প মানুষ পাচ্ছে। আর মানুষের অভিযোগ শুনে কাজ করাই তো জন প্রতিনিধিদের কর্তব্য।

বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলেন, তৃণমূল নেতারা এতো কাটমানি নিয়ে রেখেছে এখন বিধায়ক কে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। দূত হয়ে যাচ্ছে ভুত হয়ে আসছে। পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ এদের জবাব দেবে।

পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে দিদির দূত কর্মসূচির লক্ষ্যই হলো জনসংযোগ বাড়ানো। কিন্তু বারবার দেখা যাচ্ছে মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে তৃণমূল নেতা বা জন-প্রতিনিধিদের। দুর্নীতি ইস্যু নিয়ে বিরোধীরা চাপ বাড়াচ্ছে শাসকদলের উপর। ফলে রীতিমতো অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূলের।