এই নিদাঘের বৈকালিক-সন্ধ্যায় আমি রূপান্তরকামীদের সঙ্গে মিশে যাই মানব সংবেদ-এর আয়োজনে এলজিবিটিকিউ- এর কাছ থেকে জীবনের পাঠ শিখি

তালি
তমাল সাহা

রুপোলি ঝকঝকে চোখ ঝলসানো আক্রমণাত্মক মহাকাল রুদ্রকে সামনে রেখে আমি চলে যাই তালি দেখতে

এইভাবে জীবনের তালি বাজায় কারা! এরা সত্যিই কি হিজড়ে রূপান্তরকামী সমকামী আমি তো বুঝিনা কিছুই!
এরা কেউ অভ্র কেউ অর্ঘ্য কেউ রূপা কেউ পরমা কেউ ঊষা কেউ সৌরভ

সৌরভের কাছে আমি সামাজিক সহিষ্ণুতা শিখি। আমি তোর্সার কাছে ঋণী হয়ে পড়ি। লড়াই কাকে বলে সে আমাকে সহজে বুঝিয়ে দেয়।
দীপক আমাকে তার কাজের জায়গায় যুঝে নেবার কথা বলে।
পারুল বলে, অসহায় নিরুপায় তারা। কেন ট্রেনে ট্রেনে তালি বাজিয়ে মানুষের কাছে হাত পাতে। আরো বলে মানুষ কিভাবে তাদের এড়িয়ে চলে। কিছু দিতে হবে বলে ট্রেনের জানলার দিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে, কাগজ পড়ার ভান করে। তুমিই বলো, এটা মানুষকে অশ্রদ্ধা উপেক্ষা নয়! জীবনে ডালপালা আর তেমন ছড়াতে পারলাম কোথায়? বয়স তো বেড়ে যায়!

তারা তো নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসে না! মানুষেরাই তো তাদের নিয়ে আসে। দুজনার শখ মেটাতেই তো তারা পৃথিবীতে আসে! হতে পারে তারা প্রেমিক-প্রেমিকা, মা-বাবা বা পরকীয়া সহবাসীজন!

সুন্দর কথা বলে পারুল। এ তো দর্শনের কথা!

কাজল টানা চোখে এরা আমার সঙ্গে কথা বলে। আমি এদের রাঙানো মুখ , কপালে বড় টিপের দিকে তাকিয়ে থাকি। সম্মোহিত হয়ে যাই।
এরা নাচতে নাচতে তাদের জীবন দেখায় আর সাবলীল তালি মারে। আমি দেখি আর শেখার ভাঁড়ার পূর্ণ করি

তালির সেই আওয়াজ!
আমার কাছে অন্য ধ্বনি অন্য সুর নিয়ে আসে।
তালির সঙ্গে অপরূপ মুদ্রা শরীরী বিভঙ্গ।
জীবন নেচে ওঠে তালির শব্দতরঙ্গে

রাজনৈতিক তালিতে যখন ইধার কা মাল উধার হয়ে যায়।
মানুষকে পণ্য ভাবে রাষ্ট্র, দেশকে বিক্রির পসরা মনে করে তখন তারা তাদের জীবনের এক একটি মুহূর্ত দেখায় আর তালি মারে

নেতার ভাষণে মঞ্চের অভিনয়ে শ্রোতা দর্শকেরা হাততালি দেয়।
এখানে সমাজ যাদের আড়চোখে দেখে
তারা সুসভ্য আমাদের যাবতীয় কাণ্ডকারখানা দেখে আর নিজেরাই তালি মারতে মারতে চলে যায়!

সূর্যকে চোখ রাঙিয়ে রৌদ্রের করতালিকে তুড়ি মেরে আমি কিন্নর কিন্নরীদের তালি দেখে আসি।

এই তালি কি না-বলা এক সশব্দ বিদ্রোহ, এই হাঁটা চলার ভঙ্গিমা কি অনন্য এক রণসজ্জা, সামাজিক ব্যঙ্গ?
আমার স্নায়ুব চেতনায় দুন্দুভি বাজতে থাকে এই খরপ্রবাহে…

শ্লীলতা অশ্লীলতার দাঁড়িপাল্লায় বসিয়ে
‘তালি দেওয়া’ আর ‘তালি মারা’ এই দুটি শব্দবন্ধের মধ্যে আমি তফাৎ খুঁজতে থাকি

আর কত দৃশ্যায়ন আর কত দৃশ্যমঞ্চে চলতে থাকবে আমার পদবিক্ষেপের সঞ্চালনা!