অরণ্যের অধিকার– লড়াইয়ের অন্যতম নেতা বিরসা মুন্ডা। আজ ৯ জুন তাঁর প্রয়াণ দিবসঃ শ্রদ্ধা

ডমরু পাহাড়ে জেইগ্যে আছে বিরসা
তমাল সাহা

আরে বিরসা!
মুদের ধরতি আবা তু ঘুমাই পড়লি কেনে
যমকোপাই বনে?
উলগুলানের কথা ভুল্যে গেলে চইলবেক?
তুর মুনে পড়্যে, উলিহাটু, কুরুম্বা, বোম্বা, চাকলাদ গাঁয়ের কথা?
কত্তো ছুইট্যে ছুইট্যে বেড়াইতিস ত্যু!
বনে বনে এখনও তুর একতারা মোহন বাঁশির সুর বাইজ্যে যায়।
উলগুলান! উলগুলান! শব্দ উঠ্যে পাহাড়ের চূড়ায়!

আরে, বিরসা! তু তো মুদের শিখাইছিলি মুদের ইত্তো হাজার হাজার বচ্ছরের সংস্কিতি, মুদের পেট্যের ভাতের জমি উরা কাইড়ে লিবে?
মুদের বনভূমে মুদেরই পরবাসী বানাইবেক?
—ইসব কুনোদিনই হবেক লাই। মুরা লইড়ে যাবেক।
ডিবরি বাতি জ্বাইল্যে কালো আন্ধার রাইতে গুপনে কত্তো সভা, সমিতি, সমাবেশ কইরেছিলি ত্যূ
মুদের জাগাইবার লিগ্যে!

রে বিরসা! মুদের ধরতি আবা, তু ঘুমাইয়ে পইড়লি নাকি?

ডমরু পাহাড়ে ফির দুর্গ বানাইতে হবেক। তুকে মুদের যুদ্ধ শিখাইতে হবেক,
লুকাছুপা লড়াই–গেরিলা যুদ্ধ!
মুরা বিরসাইট হব্যেক।
উঠ না রে বিরসা! জেগ্যে উঠ!
কর্পরেট দিকু ইসব স্বাধীন দেশের দিকু
জমি জঙ্গল ফির নিজের খাস কইরে লিচ্ছে।
জমি থিক্যে সব খনিজ উঠাই লিচ্ছে।

রে বিরসা! আবার তুকে লড়াই করতে হবেক।
পুলিশ লাইন, সরকারি ভবন জ্বালাইন দিতে হবেক। জ্বালাইন দিতে হবেক বিধর্মী বানাইবার লিগ্যে গির্জাগুলানকে।
ঝটিকা আক্রমণ শানাইতে হব্যেক।
বুঝাইন দিতে হব্যেক মুরা মুন্ডা! মুরা বিরসাইট!

উ কমিশনার ফোর্বস সাহেব ও ডিপুটি কমিশনার স্ট্রিফিল্ড সাহেবের কথা তুর মুনে পড়ে না?
চোখ ফাইট্যে জল আসে না?
উরা ফটাফট গুলি চাইল্যে চারশো মুন্ডার জান লিয়ে লিলেক।
ইবার লড়াই সেই মুলকাই লড়াই,হকের জমিনের লড়াই।
বন ও ভূমির অধিকার তো তু শিখাইছিলি মুদের!

তুর মুন্যে আছে বোগাটো-তে সে কী বিশাল বড়ো সভাটো?
মুন্যে আছে, মনমারু, জারকাইন গাঁওয়ের জমায়েতের কথা?
সেই সভাতে তু কত্ত কি বুইলেছিলি?
তুর কথা মুন্ডারা শুইনছিল,আর
রাগে ক্ষোভে ফুইটে উঠছিল।

উঠ রে বিরসা! বিষ্যুৎবার আইস্যে পড়ে। বিষ্যুৎবার আইসলেই তুর কথা মুনে পড়ে। বিষ্যুৎবারের দিন তুর জন্ম হইছিল বট্যে।
তু হইয়ে গেলি বিরসা।

তুর পেট্যে খুব খিদা ছিল রে বিরসা! সেনেত্রার জঙ্গলে তু ঘুমাইছিলি।
ডোমকা মুন্ডার বউ সালি তুর লিগ্যে ভাত রাঁইধতেছিল।
সেই চুলার ধুঁয়া দেইখ্যে দিকুরা তুকে ধইরে ফেলে।
তুর আর ভাত খাওয়া হইল না বুঝি বিরসা।
বিরসা রে বিরসা!
তুর দুইটা খিদা ছিল বট্যে।
জল- জমি-জঙ্গলের খিদা মানে উলগুলানের খিদা আর ভাতের খিদা।
উরা জেলখানায় তুকে রাইখলো বুট্যে কিন্তু কি বিশ্বাসঘাতক রে বিশ্বাসঘাতক! তুর ভাতে বিষ মিশাইয়ে তুকে খতম কইরে দিলে!

রে বিরসা! আর কত্ত ঘুম তুর! উঠ!
আবার উলগুলানে যেতে হবেক।
তীরগুলান, ধনুকগুলান কুথায় কুথায় রাইখছিস তুকে বুইলতে হবেক!
কোন পাহাড় জঙ্গলে উসব ঝুলাইন রাইখছিস বুল না রে বীরসা!
আবার উলগুলান হবেক।
ধামসা মাদল বাইজবেক।
ইবার উলগুলাব হবেক মুদের নিজের দেশ্যে, স্বাধীন দেশ্যে।

উ দ্যাখ, ডমরু পাহাড় থিক্যে ছূইট্টে আইসছে বিরসা!