ঠুঁটো / তমাল সাহা

পার্শ্বশিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। অনশনের কুড়ি দিন অতিক্রান্ত। ভারতবর্ষে স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষকদের এই আন্দোলন একটি অন্যমাত্রা নিচ্ছে এবং ক্রমাগত ঐতিহাসিক হয়ে উঠছে। তবুও রাষ্ট্রের এই আন্দোলনের দিকে কোনো নজর নেই। রাষ্ট্রনায়কদের চোখ,কান, মুখ আছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ঠুঁটো
তমাল সাহা

বাংলা শব্দকোষ খুলে দেখি
হুঁশ ও টনক শব্দ দুটি উধাও।
তাগড়া মার্কা শরীর নিয়ে
দুটি শব্দ জাঁকিয়ে
পৃষ্ঠার ওপর বসে আছে।
শব্দ দুটি হলো— দালাল ও গোলাম।
ব্র্যাকেটে লেখা আছে— সংবাদপত্র।

আমি যুগপৎ আশ্চর্য ও হতবাক হয়ে যাই
এবং দুটি নামজাদা বাংলা সংবাদপত্রে
হাতে তুলে নিই।
পৃষ্ঠা ওল্টাই, ওল্টাতেই থাকি
দেখি অ-এ অনশন, আ-এ আন্দোলন—
কোনো খবর নেই।
পাতা জুড়ে এ মাথা-ও মাথা
অনুপ্রেরণার সরকারি বিজ্ঞাপন।
বুঝি নতুন ধারার সংবাদপত্র
মানুষ নয় শাসকই আপন।

শেষ পর্যন্ত শব্দ কোষে
আরও শব্দ খুঁজতে খুঁজতে
আমি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।
একটি পৃষ্ঠায় দেখি শব্দটি
বড় করে লেখা— ঠুঁটো।
ব্র্যাকেটে লেখা— শাসক।

শেষ পর্যন্ত বুঝি
কুড়ি দিন অনশনের পরেও
মন্ত্রীরা কেন চুপ, দিচ্ছেন না ‘রা’।
আন্দোলনকারীরা শিক্ষিত হয়েও
এতো নির্বোধ— হায়!
শাসক যে মূক বধির অন্ধ ঠুঁটো
এতোদিনেও বোঝেননি তারা।

ভাষাবিদগণ অভিধান পরিমার্জনে
‘বিচার’ শব্দটি তুলে দিয়েছেন এবার।
বলেন, শব্দটি বিলুপ্তপ্রায় অচল,
চলে না আর।
সেখানে সংযোজিত হলো
ঐতিহাসিক শব্দ ‘স্বৈরাচার’।