ভোটের দামামা বেজে গেছে। টুকুন কীভাবে ভোট দেখছে!
টুকুন জ্যোতিষী হয়ে গেছে
তমাল সাহা
রাত তখন সাড়ে তিনটে। টুকুন এক নাগাড়ে ভুল বকে চলেছে। আমি ওর বিছানার কাছে যাই। দাঁড়াই।
শুনছি ও বলছে, এই যে সুদর্শন বাবু, কি! যা যা বলেছিলাম মিলছে তো? আপনি বলেছিলেন জ্যোতিষশাস্ত্র মিথ্যা। আমি বলেছিলুম মিথ্যা নয়। আমি বলেছিলাম না আকাশ ভরে যাবে যুদ্ধ বিমানে। ছুটে চলবে মিগ আর মিরাজ। কয়েকশো সৈনিক মারা যাবে। মিলছে তো!
কি সুদর্শন বাবু? মিলছে তো?
দেশ জুড়ে মোমবাতি জ্বলবে। স্লোগান উঠবে, ‘জয় ভারত!’
কি মিলছে না? মিলছে তো!
এসবই আমি আপনার হাতের রেখা দেখে বলেছিলুম। মনে পড়ে?
এবার শুনুন। সোজা হয়ে দাঁড়ান। কপালের রেখাগুলো দেখি! এই যুদ্ধ-যুদ্ধ হাওয়া পরিস্থিতিতেই আপনাকে বলেছিলাম কিনা ভোটের দিন ঘোষণা হবে। কি হল তো!
আরে! টুকুনের বয়স মাত্র ষোলো হলে কি হবে,’বাপকা বেটি’ প্রবাদটি বেমালুম ভুলে গেলেন? লে হালুয়া!
এবার বসন্তে দেশপ্রেমের হাওয়া উঠবে না? নিশ্চিত উঠবে। সেই বসন্ত হাওয়ায় আকাশে আকাশে ভোটের কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল ফুটবে। এবার হোলিতে দেখবেন উড়বে প্রচুর গেরুয়া দেশপ্রেমের আবীর।
তারা মধ্যে সীমান্তে গুলি বিনিময়ের সংবাদও পাবেন।
সোজা হয়ে দাঁড়ান। কপালটা টানটান করুন। সব রেখা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না।
ভোট হবে চুয়াত্তর দিন ধরে। মহাভারতের যুদ্ধ হয়েছিল মাত্র আঠারো দিন। তার চেয়েও মহাযুদ্ধ এটা। শুনে নিন।
ভোটে বুথ দখল হবে। রিগিং হবে। তার আগে মাঠে-ময়দানে প্রচুর খিস্তি খেউড় হবে। প্যারা মিলিটারি থাকলেও হবে। বাইক বাহিনী নামবে। ত্রিশূল তলোয়ার পিস্তল তো থাকবেই। বুথ কেন্দ্রের সামনে বম্বিং হবে। লোক ভয়ে পালাবে। কিছু সাধারণ লোক বেফালতু মারা যাবে। এই না হলে ভোট!মিলিয়ে নেবেন! মিলিয়ে নেবেন!
যুদ্ধে আর ভোটে একটা কমন দৃশ্য আছে। কি দেখবেন বলুন তো?
যুদ্ধেও মৃত মানুষের মুখ দেখবেন। ভোটেও মৃত মানুষের মুখ দেখবেন।
যুদ্ধ আর ভোটের ফলাফল মৃত মানুষের মুখ।
আপনার টুকুন রাজজ্যোতিষী হয়ে গিয়েছে। সে জ্যোতিষ সম্রাজ্ঞী শিরোপা পেয়েছে। মিলিয়ে নেবেন। মিলিয়ে নেবেন, সুদর্শন বাবু!
স্ট্যাম্প পেপারে সই করে লিখে দিচ্ছি। না মিললে টাকা ফেরত নিয়ে যাবেন।
আরো শুনুন,
সুদর্শন কাঁদিয়া ফিরিবে জ্যোৎস্না ভরা রাত….
ভোট আসিবে আবার কোনো রৌদ্রের ভিতর
চতুর্দিকে উত্তোলিত হাত—
ভাত! ভাত! ভাত!