অবতক খবর,২ জুন,মালদা: কাঁচি দিয়ে কেটে গিয়েছিল এলাকারই এক মহিলার হাতের তালু। তাই দেরি না করে স্থানীয় হাসপাতালে গিয়েছিলেন টিটেনাস ইনজেকশন নিতে। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মী ভুলবশত কুকুরে কামড়ানোর ইনজেকশন দিয়ে দেন ওই মহিলাকে। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এই মহিলা। বাড়ি ফিরে এসে ক্রমাগত মাথা ঘোরা ও বমি করতে থাকেন। ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায় মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক সদর এলাকার জুড়ে। যদিও এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্তারা। ঘটনার জেরে হাসপাতালে চিকিৎসক সুব্রত চৌধুরীকে কে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান এলাকার বাসিন্দারা। যদিও রাজ্য-জুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেহাল নিয়ে খোঁচা বিজেপি জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়ার। অন্যদিকে সাফাই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা যুব ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি জিয়াউর রহমানের।আর গোটা ঘটনা কে ঘিরে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির তরজা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সঙ্গীতা গুপ্তা হরিশ্চন্দ্রপুর সদর এলাকার কলম পাড়ার বাসিন্দা। তিনি একটি সেলাইয়ের দোকান চালান। সেলাই করতে গিয়ে কাঁচি দিয়ে তার হাতের তালু কেটে যায়। তিনি দেরি না করে স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে যান টিটেনাসের টিকা নিতে। সে সময় হাসপাতালে কুকুর বিড়াল কামড়ানর ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছিল। তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান তার হাত কেটেছে টিটেনাস নিতে হবে। এ সময় এক কর্তব্যরত নার্স সঙ্গীতা দেবীর হাতে পরপর দুটি ইনজেকশন দিয়ে দেন। এরপর আবার তার হাতে তৃতীয় ইনজেকশন দিতে আসবে সঙ্গীতা দেবীর সন্দেহ হয় এবং তিনি ইঞ্জেকশন দিতে বাধা দেন। তার সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্যরত নার্সকে জিজ্ঞেস করেন তাকে এতোটা ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে কেন? তখনই তিনি জানতে পারেন তাকে ভুলবশত কর্তব্যরত নার্স কুকুর কামড়ানোর এন্টি রেবিস ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছেন।

তিনি তৎক্ষণাৎ হাসপাতালের বি এম ও এইচ ডক্টর অমল কৃষ্ণ মন্ডলের কাছে ছুটে যান। ডাক্তারবাবু তাকে আশ্বস্ত করেন ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভুল করে কুকুর কামড়ালে ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে শীঘ্রই টিটেনাস নেওয়ার জন্য হাসপাতালে আবার পাঠিয়ে দেন। তার সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয় কুকুর কামড়ানোর ভ্যাকসিনের বাকি ডোজ পরবর্তী দিনে এসে নিয়ে নিতে। তারপরই ওই গৃহবধূর মনে আশঙ্কা তৈরি হয় এবং বাড়িতে গিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকেরা জানান সঙ্গীতা বাড়িতে এসে কয়েক বার বমি করে এবং মাথা ঘুরে পড়ে যায়। ভুল ইনজেকশন দেওয়াতে এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি সংগীতার পরিবারের।

এ প্রসঙ্গে ওই গৃহবধূ সঙ্গীতা গুপ্তা জানান, সকালে কাজ করতে করতে কাঁচি দিয়ে আমার হাত কেটে গিয়েছিল। আমি দেরি না করে হাসপাতালে যাই টিটেনাস নেওয়ার জন্য। হাসপাতালে তখন কুকুর বিড়াল কামড়ানোর ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছিল। আমাকেও সেখানে উপস্থিত থাকা নার্স কুকুরে কামড়ানো ইনজেকশন দিয়ে দেন। তারপর থেকে আমি আতঙ্কে রয়েছি।হাসপাতালের চিকিৎসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল আমাকে জানিয়েছেন ভয়ের কিছু নেই। এরপরে আমি বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ি। জানিনা কি হবে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসার পরিসেবা এত বিশৃংখল কেন।

এদিকে হাসপাতালে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।স্থানীয় বাসিন্দা পূর্ণিমা সাহা জানান এই ভাবে রোগীদের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। যেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের পাড়ার গৃহবধূ সংগীতা কে ভুল ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হল। এখন সে অসুস্থ হয়ে আছে। এখন যদি তার কিছু হয়ে যায় তাহলে এর দায় কে নেবে।

এ প্রসঙ্গে হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল যুব হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লক সভাপতি জিয়াউর রহমান জানান ঘটনার কথা শুনেছি। কোথাও একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। সেই সময় কুকুর বিড়ালের ভ্যাকসিন দেওয়ার টাইম ছিল। সেখানেই গন্ডগোলটা হয়েছে। আমরা সব কিছু খতিয়ে দেখছি। এদিকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে বিজেপির কটাক্ষের উত্তরে তিনি জানান বিজেপি ভিত্তিহীন কথা বলছে। মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে রাজ্যের স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। সকল ধরনের মানুষের সুবিধা পাচ্ছে।

এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি জেলা সাধারণ সম্পাদক কিষান কেডিয়া। তিনি জানান রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হয় ভুল চিকিৎসায় না হয় বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে। হরিশ্চন্দ্রপুর এক মহিলাকে টিটেনাস ইনজেকশন না দিয়ে কুকুর কামড়ানোর টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন ওই মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এই ভাবে বেশি দিন চলতে পারেনা।

যদিও এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। ক্যামেরার সামনে চিকিৎসক সুব্রত চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

কিন্তু হরিশচন্দ্রপুর গ্রামে হাসপাতালে এই ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা দেখে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা।