জিঙ্গল বেল / তমাল সাহা

ক্যরোল সঙ্গীত হবে। জিঙ্গল বেল বাজবে।সান্টা ক্লজ যেন একেবারে লেপমুড়ি দিয়ে আঁটোসাঁটো পোশাক পরে শীত ঠেকিয়ে চলে এসেছে। সেই ক্যারোল সঙ্গীত, জিঙ্গল বেলের শব্দ কারা শুনতে পায় না? সান্টা ক্লজ কাদের কাছে যায় না? সেটা প্রশ্ন করেছে মেয়ে, আমাকে।প্রশ্নগুলি শুনুন।

জিঙ্গল বেল
তমাল সাহা

আমার মেয়ে টুকুন। ফোরে পড়ে।আজ বড়দিন। সকালে উঠে আঁকার খাতা নিয়ে আমার সামনে হাজির।

বলো তো,এটা কার ছবি?

কেন,সান্টা ক্লজ। খুব দারুণ এঁকেছিস তো!

এবার বলো,সান্টা ক্লজের পোশাক, ঝুলি, টুপি লাল কেন? দাড়ি,চুল সাদা কেন?

আমার চোখ তো ছানাবড়া। ওই, লাল সাদায় ভালো মানায় তো! যেমন তোর মাকে লালপেড়ে সাদা শাড়িতে খুব সুন্দর দেখায়।

তুমি ঘেঁচু জানো। লাল হচ্ছে উজ্জ্বল দিনের প্রতীক। সাদা হচ্ছে শুদ্ধ সত্যের প্রতীক।

বাঃ ঠিক বলেছিস তো!

তবে সান্টা ক্লজ বলে কিছু নেই, বাবা!

কি করে বুঝলি?

কাল মাথার কাছে মোজা ঝুলিয়ে রেখে ঘুমিয়েছিলাম। কোন উপহার রেখে যায়নি।

ও… এই কথা? আমরা তো খেতে পাই, তাই তোকে কোন উপহার দেয় নি। সান্টা ক্লজ চলে গিয়েছে গরিবদের পাড়ায়।

মুন্নিরা তো গরিব। মুন্নিকেও কিছু দেয় নি সান্টা ক্লজ।

কি করে বুঝলি?

ওই তো মুন্নির মা। কলতলায় বাসন মাজছে। ওকে জিজ্ঞেস করো। দেখো কি বলে!
আচ্ছা বাবা, বড়দিন কি?

ওইদিন যিশু জন্মেছিলেন।

আমি ভেবেছিলাম বড় মানে বিশাল, দীর্ঘ দিন।

তাই তো। তুই তো ঠিকই বলেছিস।

তাহলে তো গরিবদের অনেক কষ্ট বেড়ে গেল।

কেন?

অত বড় লম্বা দিন!না খেয়ে কাটাতে হবে। রাত্তির আসতে দেরি হবে। ঘুমোতে যে দেরি হবে। চোখে ঘুম নেমে এলে খিদের কষ্ট মানুষ অনেকটাই ভুলে যায়।
বাবা! বড়দিনে মানুষ পার্ক স্ট্রিটে যায়,শাঁখারি টোলা বাই লেনে যায় না কেন?

আমি মেয়ের দিকে চেয়ে থাকি।

বাবা, বড়দিন আর আচ্ছে দিন কি এক?

বড়দিন মানে বড় দিন। আর আচ্ছে দিন মানে ভালো দিন।

আচ্ছা বাবা, আচ্ছে দিন, স্বচ্ছ দিন দেখতে কি চশমা লাগে?

কেন?

দেখবে স্বচ্ছ অভিযানের পাশে গান্ধিজির চশমা রাখা আছে।
বাবা!

কি?

বড়দিন আসলে বড়লোকদের দিন। কেক আর কমলালেবুর দিন। গরিবরা কোনদিনও কেক, কমলালেবু খেতে পারে না, পারবেও না। একটা কেক, একটা কমলা লেবুর দাম জানো?

পেটে খিদে নিয়ে ক্যারোল সঙ্গীত আর জিঙ্গল বেলের ধ্বনি শব্দদূষণ হয়ে দাঁড়ায় ওদের কাছে।

জিঙ্গল বেল! জিঙ্গল বেল!
দুলতে থাকে আমার চোখের সামনে…