অবতক খবর,৮ এপ্রিল: চাল নিয়ে চালবাজি হবে কে না জানতো! চাল যে বহু প্রকার,তা শিখে গেল মানুষ,প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায়। তারা দেখতে পেল, চাল কোথা হইতে আসে, চাল কোথায় যায়, কাহারা চাল দেয় এবং কাহারা পায়।

এবার নৃশংস ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক লীলায় সমাজসেবী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত তা করোনা আক্রান্তের সীমা ছাড়িয়ে যাবে কিনা এ বিষয়ে সমাজতাত্ত্বিকেরা গবেষণায় মগ্ন হয়েছেন। এক বিষয়ে গোল বেঁধেছে। নেতারা সমাজসেবী হয়,না সমাজসেবীরা নেতা হয়? সমাজসেবীর পরবর্তী স্তরে নেতায় উত্তরণ, না নেতা হবার পর সমাজসেবীতে রূপান্তর? অনেকটা যেন সেই ধাঁধা… মুরগি আগে না ডিম আগে!

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে সমাজসেবার চালের উৎস রেশনের দোকান। বহুমুখী জননেত্রী বিষয়টি দেরিতে হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ঘোষণা করেছেন রেশনের চাল ত্রাণ হিসেবে দেওয়া যাবে না। তিনি বুঝে গেছেন তার ছাত্ররা রেশনের চাল বিতরণ করে দেশসেবক সাজছেন। মানুষ বুঝতে পেরে গেছে। আখেরে তার মমতাময়ী রূপ কালিমালিপ্ত হচ্ছে।

রেশন দোকান থেকে চাল পাচারের ঘটনা স্থানীয় পাল্লাদহে ঘটেছে। উত্তর দমদমের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের এক দলীয় কাউন্সিলরের বাড়িতে ১০ বস্তা রেশনের চাল পাওয়া গেছে। রেশনের দোকানের মালিক রাজনৈতিক হুমকি,শাসানির শিকার হয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চলে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রেশন ডিলার কলা-কৌশলে গ্রাহককে চাল বিতরণ করছেন। তিনি বলছেন, এখন পুরো চাল দেওয়া যাবে না,১৫ দিন পর আবার আসবেন। বর্তমানে নেতারা ত্রাতা হয়েছেন। ‌চাল ত্রাতা। এখন নেতারা জিমনাসিয়ামে শরীরচর্চা না করেও পেশীবহুল। ‌তারা চাল বিলি করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রেশনের চাল। জনগণ ভিক্ষুক, রেশনের চাল তা আবার কাড়া, আকাড়া? তারমানে রেশন গ্রাহক বলি হচ্ছেন। তাদের ভাগের চাল নিয়ে যাচ্ছে নেতারা। রেশন দোকানদারকে করোনায় আক্রান্ত হিসেবের মত ভুলভাল হিসেব দিয়ে তার রেশনের দোকানের হিসাব মিলাতে হবে। কোনো ক্ষেত্রে রেশন দোকানদারকেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। তার কাছ থেকে পেশির জোর দেখিয়ে চালের বস্তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জনসেবা করা হবে। নেতারা পরের ধনে পোদ্দারি করে জনসেবা করছেন, জনগণের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।

অনেক নেতা জনসেবক সাজার জন্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা তোলা তুলেছেন। ‌ব্যবসায়ীরা তা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এখন আর তারা এই অর্থ দিতে আপত্তি করেন না। কারণ তারা জানেন যে এই টাকা তারা ক্রেতাসাধারণের পকেট থেকেই পরবর্তী সময়ে কেটে তুলবেন।

আরো অভিযোগ চাল বন্টনের প্যাকেটের নেতা-নেত্রীদের ছবি পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে অনেক চাল দেখা গেছে। এখন নমো চাল, মম চালও পাওয়া যাচ্ছে ত্রাণে।

এইভাবে চলতে থাকলে রেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত ভেঙে পড়বে। সামনের তিন-চারদিন যাবার পর থার্ড স্টেজে ঢুকে পড়বে ভারতবর্ষ। অতীব সংকট আসন্ন। চালবাজি ছেড়ে কঠোর লকডাউনে যেতেই হবে।

পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্নজনের অভিযোগ, আক্রান্তের তথ্য, মৃত্যুসংখ্যা কম দেখানো হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে,কোথায় কত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন জানা যাচ্ছে না। কারণ তার ঠিকঠাক টেস্ট করাই হচ্ছে না। বলা হচ্ছে মেডিকেল হাসপাতাল,সাগর দত্ত হাসপাতাল করোনা হাসপাতাল হচ্ছে। দুদিন বাদেই মত পরিবর্তন হয়ে গেল।

তবে একথা বলা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে যে, মৃত্যুর সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে মিথ্যা প্রচারে মানুষের ভয় কমে যাবে, লকডাউন ভেঙে পড়বে যা এখনই দেখা যাচ্ছে। এটা পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে সর্বনাশা হয়ে উঠবে। দাবি উঠুক, খাদ্য সরবরাহের রূপরেখা রচনা করে লকডাউনকে আরো কঠোর করা হোক। এই রাজ্যে প্রশাসনও তেমনভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সেইভাবে পুলিশি তল্লাশি চৌকি হচ্ছে না।‌ ফলত, মানুষও বুঝে গেছে যে লকডাউন তো তাদের জীবনে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে তো আর অতো মানুষ মরছে না।ফলত লকডাউন অবিলম্বে ভেঙে পড়বে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। যেটা বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে ভয়ানক হয়ে দাঁড়াবে।

অন্যদিকে আরেকটি বিষয় দেখা যাচ্ছে যে, দীপাবলীর বাজি ফাটানো যেমন একটা উৎসব হয়ে উঠেছিল,এখন এই অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে যে, ত্রাণ বিলি করাটাও যেন একটি উৎসব হয়ে উঠেছে। কে কত ত্রাণ দিতে পারে তার
প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে আর নেতারা যে সমস্ত টাকা রিলিফ ফান্ডে দিচ্ছেন, তার যে কি আয়ের উৎস,নেতার যে কি আয় সেসব কোন কিছুই জানা যাচ্ছে না। অদ্ভুত একটা পরিস্থিতি চলছে।

তবে লকডাউন আরো কঠোর করা হোক এটাই জনদাবি উঠুক। কারণ এতে মানুষের স্বার্থ জড়িত, জীবন মরণ জড়িত।