আজ প্রয়াত কবিবন্ধুর জন্য অক্ষরসজ্জা

এই জনপদে এক কামগার কবি হয়ে গিয়েছিল একদিন।
চড়ুই পত্র তো বটেই নামজাদা দেশ পত্রিকায়ও তার গল্প,কবিতা ছাপা হয়েছিল।
সে এসেছিল হালিশহরের মাটিতে ১৫ এপ্রিল, ১৯৪৫। সে যেতে চায়নি তবুও চলে গিয়েছিল ২৭ জানুয়ারি,২০১০, বুধবার রাত তিনটেয়।

চটকলের কবি
তমাল সাহা

জুটমিলের কথা উঠলেই মনে পড়ে লক্ষ্মীর কথা।
লক্ষ্মী নাকি হালিশহরের জলজীবী মানে জেলেদের জীবনের ঠিকা নিয়েছিল লেখাজোখায়।

সে বলতো, এই! জলে ও কলে
কেউ যেন হাত না তোলে।
এটা বলতো খুব দাপটের সঙ্গে আত্মশ্লাঘা ও অহংকারে।

লক্ষ্মী কাজ করতো মাড়োয়ারি কলে মানে শতাব্দী প্রাচীন হুকুম চাঁদ জুট মিলে।
সে ছিল ঢালাই মিস্ত্রি ওয়েল্ডার।
সে বলেছিল, আমাদের জীবন হলো ঝালাইয়ের জীবন।
আমি দক্ষ ঝালাইদার কিভাবে কোথায় ঝালাই দিলে ভাঙা জিনিস পূর্ণরূপ পাবে আমি জানি।

সে আমাকে ভাগওয়ালা ও বদলি শব্দ দুটি শিখিয়েছিল।
পাটের গন্ধ, পাটের ফেসো তার গায়ে লেগে থাকত।
সে আমাকে শুনিয়েছিল কত সব মেশিনের নাম! দেখিয়েছিল জুটমিল মহল্লা- বস্তি,
তাদের গণশৌচালয়– জীবাণু ভর্তি জীবন।
আর শুনিয়েছিল শ্রমিকনেতাদের কথা ও মালিকদের গল্প।

আমরা বসেছিলাম বাঁধাঘাটে।
সে একদিন সপ্তর্ষিমণ্ডলের নক্ষত্রের মতো প্রশ্ন তুলেছিল,
মিল তো একটা, শ্রমিক তো একটা শব্দ,তবে এতো ইউনিয়ন, এতো নেতা কেন?

লক্ষ্মী,লক্ষ্মীনারায়ণ পাড়ুই–
ঝালাই করতে কবিতার কারিগর হয়ে গেল।
সে বড় মাপের ছোট মাপের অনেক কাগজে লিখেছিল।
লক্ষ্মী বলেছিল, ছাপার অক্ষরে যে কাগজে কবিতা বেরোয় সেটাই বড় কাগজ।
ওর মোদ্দা কথা, লেখাকে গুরুত্ব দিয়েছে বলেই সেটা বড় কাগজ। লেখকের নামকে তো গুরুত্ব দেয়নি!
তোমাদের চোখে কাগজ ছোট বড় হতে পারে।
সাহিত্য শব্দটা ছোট নয়।
সাহিত্যকে যে কাগজ ভালোবাসে সেটাই বড়।
আমি লক্ষ্মীর দিকে তাকিয়ে থাকতুম।

লক্ষ্মী লিখেছিল,
মাটির উপর দাঁড়িয়ে আছি
তুলছি না পা
তুললে এ পা রাখব কোথায়?