উৎপল রায় :: অবতক খবর :: ময়নাগুড়ি ::  চরম দুরবস্থার মাঝেও গান গেয়ে করোনা নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন ময়নাগুড়ি ব্লকের ৮২ বছরের বাউল সিদ্ধা গোপাল। ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়িগামী রাস্তার ধারে দ্বারিকামারি গ্রামে একটি বেড়ার ঘরে স্ত্রী পার্বতী সহ এক মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে ও এক বিশেষভাবে সক্ষম ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার। লকডাউনের মাঝে চরম আর্থিক সংকটে অতিবাহিত হচ্ছে এই বাউলের জীবন। তবুও সমাজকে সচেতন করতে দোতারা নিয়ে বাইরে গ্রামের রাস্তা ধরে পৌঁছে যাচ্ছেন করোনা নিয়ে প্রচার করতে।

ছোট থেকেই সিদ্ধা বাউল বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন তার গানের নেশায়। দশ বছর বয়সে বাংলাদেশের ঢাকা ছেড়ে চলে আসেন দিনাজপুরে। এরপর সেখান থেকে শান্তিনিকেতনে গিয়ে যোগ দেন বাউলগানের আসরে। দোতারা নিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। হেঁটে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়েছেন। পরনে গেরুযা ঢোলা পাঞ্জাবি, মাথা ভরা লম্বা চুল, হালকা দাড়ি- দূর থেকেই তার আওযাজ শোনা যেত। উত্তরবঙ্গজুড়ে সিদ্ধা গোপাল বাউলের পরিচিতি রয়েছে। তবে লকডাউনের মাঝে অভাবের সংসারে বাউলের করুণ অবস্থা। সেভাবে বাইরে আগের মতো গান গাইতে পারেন না। তবুও সারা বিশ্বে যে মহামারি শুরু হয়েছে তা নিয়ে গ্রামবাসীকে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি। গ্রামের বিভিন্ন হাটেও যাচ্ছেন প্রচারে। সকলকে মাস্ক পরার জন্য আবেদন করছেন।

নিজ পরিবারের বর্তমান অবস্থা শোচনীয়। ছোট ছেলে গণেশ বিশেষভাবে সক্ষম,  সেও বাবার সঙ্গে গান গাইত। কিন্তু এখন সব বন্ধ। বড় ছেলে গোকুল অস্থায়ী কাজ করত, তাঁরও কাজ নেই এই সময়। এছাড়াও এক মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে রয়েছে বাউলের। তাঁরও দেখভাল করতে হয়।

বাউল জানান, র‌্যাশনের চাল-ডাল ছাড়া শিল্পী ভাতার এক হাজার টাকাই এখন একমাত্র ভরসা। বয়সের ভারে ক্লান্ত হয়ে করোনা নিয়ে সচেতন করতে তিনি যাচ্ছেন গ্রামের পথে। তিনি বলেন, প্রশাসন থেকে সহযোগিতা পেলে জীবনের বাকি সময়টুকু কিছুটা শান্তিতে থাকতে পারব।