গোপীনাথের গল্প
তমাল সাহা

( বিপ্লবী শহীদ গোপীনাথ সাহার শততম মৃত্যু দিবস)

সাদামাটা স্বাভাবিক শান্তশিষ্ট হলেও গোপী ছিল একরোখা। থাকতো শ্রীরামপুরে কিন্তু টার্গেট তো তার একটাই
পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট।

গোপীর চোখে ভাসে বুড়িবালামের যুদ্ধ, বাঘা যতীন।
প্রতিবন্ধক কে? চার্লস টেগার্ট
রাইটার্স বিল্ডিং, অলিন্দ যুদ্ধ, বিনয় বাদল দীনেশ প্রতিবন্ধক কে? চার্লস টেগার্ট
তার বিপ্লবী গুরু জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ গ্রেফতার
প্রতিবন্ধক কে? চার্লস টেগার্ট

এই টেগার্ট শব্দটিই তাকে বানিয়েছিল আগুনখোর।
শ্রীরামপুর থেকে সে চলে এলো কলকাতায়। টেগার্ট থাকে কোথায়? সে রীতিমতো রেকি করল। বিপ্লবীদের চোখই আলাদা। চিনে ফেলল তার আস্তানা। দু’নম্বর কিড স্ট্রিট। খোঁজ খবরে আরো অনেক গোপন তথ্য পেলো সে।

সেদিন শীতের ভোর। কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। হাঁটতে বেরিয়েছে টেগার্ট সাহেব। যাবে ময়দানে।
গোপীও তো প্রাতর্ভ্রমণে যাবে।পরনে ধুতি,খাকি জামা। আসল দরকার যে যন্ত্রটা সেটা তো তার কাছেই রয়েছে। আর তার শরীরকে ক্রমাগত উষ্ণ করে চলেছে।

পশ্চিম দিক থেকে কে আসছে, টেগার্ট না!
কলকাতা জুড়ে তখন সাহেবের বাচ্চারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব সাহেবদের দেখতেই হুবহু একরকম। সাহেবকে টেগার্টের মতোই মনে হল।
এত মুখোমুখি, সুযোগ নষ্ট করা যায়! গোপী দ্রুত পিস্তল বার করে গুলি চালিয়ে দিল। সে নিশ্চিত। টেগার্ট খতম। কিন্তু পরে জানা গেল, না টেগার্ট নয়। কিলবার্ন কোম্পানির এক কর্মকর্তা রাস্তায় পড়ে আছে। নাম তার আর্নেস্ট ডে।

বিচার। অবধারিত ফাঁসি।১ মার্চ ১৯২৪। ফাঁসির দিন।সেলে গিয়ে দেখা গেল গোপী ঘুমিয়ে আছে।
ঘুম থেকে উঠে ঋজু ভঙ্গিতে দৃঢ় পায়ে হেঁটে গিয়েছিল ফাঁসির মঞ্চের দিকে। শেষবারের মতো টেগার্ট সাহেবের দিকে বক্রদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল গোপীনাথ আর বলেছিল, ভুল তো হতেই পারে। ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকীরাও ভুল করেছিল কিন্তু তৈরি হচ্ছে প্রজন্ম। প্রস্তুত থেকো টেগার্ট সাহেব।

বিপ্লবীদের মৃতদেহকেও ভয় পায় শাসক। তার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্সি জেলেই দাহ করা হয়েছিল।

শোনা যায় হরিশ পার্কে তার জন্য শোকসভা হয়েছিল। সুভাষচন্দ্র বসু গোপীনাথের উত্তরীয় মাথায় বেঁধে উত্তেজক বক্তৃতা দিয়েছিলেন

গোপীনাথ তো একক কোন ব্যক্তি নয়–এক সর্বজনীন সাহস ও একটি প্রতিবাদী প্রত্যয়।