অন্যদুর্গা -আট

এই বঙ্গোপসাগরীয় দেশ মানেই ঘটমান বর্তমান।মানুষ যে কী, মানুষ জানে না।খুনিও হয়ে ওঠে শিল্পী। কখন যে কিভাবে কী ঘটে যায়!!!

খুনি চন্দন ও দুর্গা প্রতিমা
তমাল সাহা

চন্দন চন্দ্র। কোনো খুনির নাম এত সুন্দর হতে পারে! একদিকে চন্দনের সুবাস, অন্যদিকে চন্দ্রের জ্যোৎস্না।

চন্দন চন্দ্র। পশ্চিম মেদিনীপুরে থাকে। একটি খুনের মামলার অপরাধী সে। মেদিনীপুর! বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম, মাতঙ্গিনীর দেশ। সেখানকার অধীবাসী চন্দন, সে কিনা খুনি!

২০১৬। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের ঘটনা বলছি। দশ বছর ধরে চন্দন জেলের ঘানি টানছে। সত্যিই কি ঘানি টানছে? সে তো এখন সৃজনশীল শিল্পী।

জেলবন্দি সংশোধন কর্মসূচির একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। জেলের বিভিন্ন কর্মশালার সে প্রতিমা নির্মাণের নৈপুণ্য প্রদর্শন করে। চন্দন শেষ পর্যন্ত পাঁচজন কয়েদিকে নিয়ে একটি দল তৈরি করে।

প্রতিমা শিল্পে কারিগরি দক্ষতা দেখানোই ছিল তাদের কাজ। সেবছর তাদের থিম ছিল ‘টু অসুরাস’ মানে দুই অসুর। একটি অসুরকে মহিষাসুরমর্দিনী বধ করছে, অন্য অসুরটি কৃত দুষ্কর্মের জন্য অনুতপ্ত, মাতৃ প্রতিমার কাছে ক্ষমা চাইছে।

খুনির কাছে মৃন্ময়ী মুর্তি জননী!
কত কি ঘটে এই দেশে,
এই পলল মৃত্তিকা বিধৌত সমভূমি, এই গাঙ্গেয় প্রদেশে।

চন্দন ও তার দল সেবার বাইরের কাজেরও অর্ডার পেয়েছিল। সেবার তারা দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জয়নগরের নেতাজি সুভাষ সবুজ সংঘের প্রতিমাও গড়েছিল। সেটা ছিল ডাকের সাজের প্রতিমা। বারো ফুট উঁচু।

আলিপুর জেল সুপারিন্টেন্ডেন্ট তখন স্বরূপ মন্ডল। তিনি জানান, আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের চৌতারায় পুজোর আয়োজন করে কয়েদিরাই। প্রতিমা তৈরির উপাদান যেমন কাঠামোর কাঠ, বাঁশ, মাটি, খড়, রঙ, জেল থেকেই বরাদ্দ করা হয়।

কারাগার! কার আগার? খুনিরা গড়ে তোলে জননী। অদ্ভুত আমার দেশ! আশ্চর্য আমার দেশ! আমার বৈচিত্রময় বাংলা।