খিস্তির পক্ষে এক কিস্তি
তমাল সাহা

অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদন

খিস্তির পক্ষে সাফাই গাইছি। রাষ্ট্রীয় মাতব্বর যদি প্রকাশ্যে প্রশাসককে বলে এই প্রলাপন!এই চুরকায়স্থ!— এমন সম্বোধন বা থাপ্পড় মারব বা কানমলা দিতাম,এটা অশ্লীল বা শ্লীল কে বলবে?

নজরুল যদি ব্যবহার করেন ন্যাংটো,শরৎচন্দ্র যদি ব্যবহার করেন মাগি,হুতোম প্যাঁচা যদি তাঁর লেখায় লিখিত রূপ দেন মিনসে, ভাতার, বেশ্যা বা মাইকেল যদি নাটকে রাড়ি শব্দটি ব্যবহার খরেন– এটা শ্লীল-অশ্লীল বা খিস্তিখেউর কে বলবে? বাজারে শব্দ মাপক দাঁড়িপাল্লা পাওয়া যায় নাকি! এইসব শব্দের তো অভিধানও আছে।
মহাভারতে রাজসভামধ্যে সুধীজনের সামনে রজস্বলা দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ দৃশ্য এবং বস্ত্রহরণ পর্ব পঠন অশ্লীল নয়?

নবারুণ ভট্টাচার্য্ তো পুরো খিস্তি লিখেই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুরস্কার পেয়েছেন। পুলিশকে বোম মারুন- এই অনুজ্ঞাবাচক
বাক্য, এটা কি শ্লীল? মণিভূষণ ভট্টাচার্য্য কবিতায় বানচোদ ও হারামি শব্দটি ব্যবহার করেছেন,কে বলবে শ্লীল না অশ্লীল এবং তিনি রবীন্দ্র পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় পুলিশ ৭০ দশকে খিস্তির বন্যা বইয়ে দিয়েছে। নকশলাইট যুবককে বিপ্লব গাড়ে ঢুকিয়ে দেবো,খানকির বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা বানচোদ বলেছে, এগুলি কি শ্লীল ছিল? আর থার্ড ডিগ্ৰী– গরম বালবে চুমু, শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা, কম্বল ধোলাই,যোনিতে,গুহ্যদ্বারে রুলের অনুপ্রবেশ এসব ঘটনার কথা মনে পড়ে?অর্চনা গুহ নিয়োগী, অসীমা পোদ্দারের নাম স্মৃতিতে আছে তো? দেয়ালের সামনে তরুণদের দাঁড় করিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডের গুলি– আছড়ে পড়ে লাশ, রক্তে ভিজে যায় মাটি, বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায় মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ– এসব অশ্লীল!!??

মণিপুর, ইম্ফল– কাংরা দুর্গ।১১ জুলাই ২০০৪। সেনাবাহিনী ধর্ষণ করল থাংজাম মনোরমাকে।তারপর? মনোরমার স্তনদেশ খেলো চারটি গুলি, যোনিপ্রদেশ খেলো তিনটি গুলি। এর প্রতিবাদে ৪৫ থেকে ৭৩ বছর বয়সী বারোজন মনিপুরী মা উলঙ্গ হয়ে সোজাসুজি রাইফেলধারীদের চ্যালেঞ্জ জানায়। তারা সম্পূর্ণ নগ্ন। আয়! রেপ করবি আয়! সোচ্চারে আমন্ত্রণ জানায়। এটা অশ্লীল!!

আর এই ২২ মে ২০২২ কান ফেস্টিভ্যাল। রেড কার্পেটে প্রদর্শিত হচ্ছে জর্জ মিলারের ‘থ্রি থাউজেন্ড ইয়ার্স অব লঙ্গিং’ সিনেমা। ইউক্রেন যুদ্ধে শত শত নারী ধর্ষণের সক্রিয় প্রতিবাদে শারীরিক পোশাক উন্মুক্ত করে দাঁড়িয়ে পড়লেন এক নারী। ঊর্ধ্বাঙ্গ ইউক্রেনের পতাকায় রঙিন– নীল হলুদ, লেখা– স্টপ রেপিং আস।নিম্নাঙ্গের রঙ রক্তাক্ত লালে লাল। সঙ্গে সোচ্চার স্লোগান– স্টপ রেপিং আস। এই সাহসী দৃশ্য এবং গর্জনশীল প্রতিবাদী বাক্যবিন্যাস অশ্লীল, অসভ্য???

তোমার রাজপথে রাস্তায় যে উন্মাদিনী ছুটে বেড়ায় তা অশ্লীল? বগটুইয়ে যে জতুগৃহ সৃষ্টি করো, তোমার রাজনৈতিক দলের মস্তানরা যখন একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত করে এবং ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে মারে তখন হে শাসক নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন করে তুমি যেসব প্রশ্ন করে অসভ্যতা প্রদর্শন করো তা কি তোমার ক্ষমতার বেলাল্লাপনা, উলঙ্গ সভ্যতার প্রতীক নয়?

রাষ্ট্রীয় পুলিশ যদি গভীর রাতে বাড়ির দরজা লাথি মেরে ভেঙে ঢোকে, পুলিশ যদি আমাকে ঘাড়ে ধরে টেনে নিয়ে যায় কালো গাড়ির সামনে আর বলে চুতিয়া! তুই কোন বালেশ্বর বাল!গাড়িতে ওঠ।
আর আমি যদি পাল্টা উচ্চারণ করি,না! উঠব না।
এই, এই না-বোধক বাক্যকে পরিবর্তন করে গর্জনে তেরিয়া ক্রোধে অস্ত্যর্থক বাক্যে পরিণত করে বলি, ধুর বানচোদ,বাল উঠব! তখনএই বাক্যের ব্যবহার অশ্লীল হবে? খিস্তি হবে?