অবতক খবর,২৯ অক্টোবরঃ আগামী মাসেই ব্যারাকপুর-দমদম তৃণমূল জেলা কমিটির সভাপতি নাম ঘোষণা হতে চলেছে। কিন্তু সভাপতি পদে কাকে আনা হবে তা নিয়ে জল্পনা এখন একেবারে তুঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকি জেলাগুলিতে সভাপতির নাম ঘোষণা করেছে তৃণমূল। কিন্তু এই জেলার সভাপতি কে হবেন তা এখনো পরিষ্কার করেনি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই জেলা সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে দলের উপর থেকে নীচুতলার সমস্ত কর্মীদের মধ্যে গভীরভাবে উৎকণ্ঠা রয়েছে। এক এক জন এক এক রকম নাম বলছেন। আর তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে। পার্থ ভৌমিককে মন্ত্রী করার পর থেকেই জেলা সভাপতি পদের সম্ভাব্য নেতা নিয়ে তুমুল চর্চা তৃণমূল ব্যারাকপুর-দমদম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হিসেবে শাসক ও বিদায়ী সভাপতির পক্ষে পছন্দের প্রার্থী তাপস রায় ছিলেন। কিন্তু তাপস রায় প্রথম থেকেই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছত্রছায়ায় থেকে কলকাতায় রাজনীতিতে সক্রিয় থেকেছেন। তাই জেলার রাজনীতিতে তাঁর তেমন কোন আগ্রহ নেই।

সূত্র মারফত জানা গেছে, তাঁর নাম প্রস্তাব করা হলেও তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে তিনি জেলা সভাপতির দায়িত্ব নিতে রাজি নন। তারপর তাঁকে জোর করে দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি তোর খাওয়া নেতা‌। ফলত তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, তাঁকে কলকাতার রাজনীতি থেকে জেলার রাজনীতিতে এনে কেউ কেউ নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছেন। অর্থাৎ তাঁর নাম সামনে রেখে পেছন থেকে সংগঠনকে নিজের হাতে নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করেছেন। তাই তিনি শিখন্ডী হতে একেবারেই রাজি নন। তাপস বাবুর এভাবে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়ার পর তাঁর জায়গায় এক বিধায়কের নাম জেলা সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁর নাম সিবিআই-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় নিজেই এই তালিকা থেকে ছিটকে গেছেন। এলাকার প্রভাবশালী গোষ্ঠী তারপর মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় যুবনেতা দেবরাজের নাম প্রস্তাব দেয়। যাতে তাঁকে শিখন্ডী করা যেতে পারে কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দেবরাজকে পুনরায় যুব সভাপতি পদে নাম ঘোষণা করে। এমতাবস্থায় ফের তারা যে তিমিরে ছিলেন সেই তিমিরেই ফিরে আসেন।দল ঘোষণা করেছে যারা মন্ত্রী আছেন তারা জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাবেন না।

এমতাবস্থায় পার্থ বাবু যে আর জেলা সভাপতি হচ্ছেন না তা একেবারে পরিষ্কার। সূত্রের খবর, তিনি জেলা সভাপতি না হলে তাঁর অনুগামী বা তাঁর পক্ষের মানুষকে তিনি এই পদে দেখতে চান‌। যাতে জেলার রাজনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যেতে পারে। কিন্তু তার প্রস্তাব একে একে খারিজ হয়ে যাচ্ছে। আরো জানা গেছে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু ২০২৪-এর নির্বাচনে ৪২-এ ৪২ লক্ষ্য রেখে দল সাজাচ্ছেন,তাই বিজেপি থেকে অর্জুন সিংকে তৃণমূলে যোগদান করানো হয়েছে। তাঁর নির্বাচনের দায়িত্ব যদি অর্জুনের উপর দেওয়া হয় তাহলে এই লোকসভা জয় নিয়ে আর কোন সংশয় থাকবে না। জেলার নিচু তলার নেতা থেকে শুরু করে সমস্ত তৃণমূলের দাপুটে নেতা কর্মীরা পরিষ্কার জানিয়েছেন যে, অর্জুন সিং-কে জেলার দায়িত্ব দেওয়া হলে এই লোকসভার সিট তৃণমূলের ঝুলিতে নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগেই বলে দেওয়া যায়। অর্জুন সিং-কে জেলা সভাপতি পদে বসালে এই লোকসভার সিটের জয় সুনিশ্চিত করা গেলেও তৃণমূলের আরেক গোষ্ঠী তা মেনে নিতে চাইছে না। যদিও যত দিন যাচ্ছে তত অর্জুন বিরোধীরা ধীরে ধীরে বিরোধিতা ছেড়ে তাঁর অনুগামী হয়ে উঠছেন।

বীজপুর থেকে বরানগর পর্যন্ত এখন হাওয়া বদলাচ্ছে। স্বয়ং অর্জুন সিং এখন রাস্তায় নেমে সংগঠন গোছাতে শুরু করেছেন। বিরোধী শিবিরে ভাঙ্গন শুরু হয়ে গেছে। একমঞ্চে দেখা যাচ্ছে বহু অর্জুন বিরোধীদের। এক একটি বিধানসভা ও এক একটি পৌরসভা এলাকা ধরে ধরে তাঁর অনুগামীদের সক্রিয়ভাবে নেমে পড়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। হাজার হাজার ঘরে বসে যাওয়া পুরনো নেতা কর্মীরা এখন অর্জুনের নেতৃত্বে সারিবদ্ধ হতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এবং জেলার রাজনীতির দক্ষ কারবারিরা জানাচ্ছেন যে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের জেলার দাপুটে নেতা অর্জুনকে বাগে আনতে যখন সমস্ত বিকল্প পথ একে একে নিষ্ফল হয়ে যাচ্ছে তখন তাঁকে আটকাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর কান ভরিয়ে অর্জুনকে রোখার শেষ চেষ্টা করছেন অনেকে। শেষ চেষ্টা চলছে। এখন এমতাবস্থায় জেলার সকলের প্রশ্ন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কান ভরিয়ে আদেও কি অভিষেকের প্ল্যানে জল ঢালা যাবে নাকি অর্জুনকে অর্জুনের তাজ বসিয়ে সভাপতির পদ দেওয়া হবে? এখন এটাই কোটি টাকার প্রশ্ন।