স্পট লাইটগুলো নিভিয়ে দাও

      তমাল সাহা / রঞ্জন ভরদ্বাজ

‘দিল দে চুকে সনম’ কে কাকে কবে কোথায় দিল দিয়েছিল সে তো ঈশ্বর জানে! আর কি বলেছিল? ‘আভি আভি তো মিলে হ্যায়’ কে কার সঙ্গে কবে মিলেছিল কে জানে!
সেটি ছিল ২৮ জানুয়ারি ২০১৮। রঞ্জন বলল,আরে দাদা! কে কে আসছে। কে কে আসছে মানে? আরে আপনি তো দাদা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেলেন! কে কে’র নাম শোনেননি? আমি বলি,ও!কৃষ্ণকুমার কুন্দন! কেউ বলে কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ। সে তো কল্যাণীতে তাকে আগে একবার দেখেছি।দারুণ গায়।

রঞ্জন বলে, কত ভাষায় গাইতে পারে, জানেন? আরে নিজেই প্রচার দিয়েছে যে হালিশহর উৎসবে আসছে ২৮ জানুয়ারি। সেটা ২০১৮ সাল।

আমি বলি, আমার এসব আর পোষাবে না। দাদা! চলো দেখে আসি কে কে-কে। তখন আর কি করি,চলে গেলাম হালিশহর উৎসব। হচ্ছে রামপ্রসাদের মাঠে। উৎসবের সভাপতি হালিশহর পৌরসভার পৌরপ্রধান অংশুমান রায়। তার সঙ্গে কথা হল। তিনি বললেন, বসুন দাদা ওইখানে বসুন।

এসব কোনো কথা নয়, আসল কথা হচ্ছে কে কে-র মঞ্চে প্রবেশ। সুদর্শন সুপুরুষৃ মেয়েদের হার্টথ্রব। এসব জলসা ফাংশন সেই ৬০ এর দশকের প্রথম ভাগে দেখেছি কাঁচরাপাড়া জুড়ে। এখনো যে বিশেষ বিশেষ গায়ক বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে জোয়ার এনে দেয়,সেটা চাক্ষুষ দেখলাম সেদিন।

”ইয়ারো দোস্তি বড়ি হি হসিন হ্যায়’ গাইছে সে। হাততালি পড়ছে। আর যখন গাইলো ‘তুহি মেরি সব হ্যায়’ তখন তো তার অনুভব আবেগ সমগ্র দর্শকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তার গানের গায়কী জনতার সঙ্গে মিশে যাওয়া আবেগ উত্তেজনায় অন্য মাত্রা নিয়েছে। তারুণ্য আপ্লুত।
শিখি গায়কী ও আবেগ দুটো একসঙ্গে মিশে গেলে একজন গায়ক কিভাবে মানুষের মধ্যে সম্পর্কের সাম্রাজ্য বিস্তার করে আর নিজেই হয়ে ওঠে গান।

মনে পড়ে তাঁর সেইসব গান। এখনো সে গাইতে গাইতে চলে যাচ্ছে কিনা,কী জানি।
সে বলেছিল, প্লাটফর্মে উঠলে শিল্পী কি অবস্থায় আছে সেটা বড় কথা নয়, শিল্প প্রদর্শন- পারফরম্যান্সটাই তার বড় কাজ আর সেটা যেন চলে যায় গানপ্রেমী মানুষের মধ্যে তখন আর মাথার ভেতর গান আর শ্রোতা ছাড়া কিছুই থাকেনা।

প্রথমবার দেখা হয়েছিল ২০১৬-তে বই উৎসবে। তখন কল্যাণীর পৌর প্রধান যিনি বর্তমানেও পৌরপ্রধান নীলিমেশ রায়চৌধুরী। কেকে-কে সংবর্ধনা জানানো হয়েছিল বই উৎসবে।

তার এইসব গান ‘জিন্দগি দো পল কি’ অথবা এই উচ্চারণ ‘হাম রহে ইয়া না রহে কাল,ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’ একটা গায়কের গায়িকীর সঙ্গে জীবনের শেষ মুহূর্ত গান হয়ে কিভাবে মিশে যায় তার উদাহরণ কে কে। কথার সঙ্গে জীবনের পরিসমাপ্তি পূর্ণতা পায়। চলে গেল‌ বড় অবেলায়।

গুরুদাস মহাবিদ্যালয়– নজরুল মঞ্চে গেয়ে গেল সেই সব গান। তড়প তড়প কে ইস দিলসে আহা নিকালতি রাহি— কি নিকালতি, কি চলে গেল কে জানে!

শেষ উচ্চারণ ছিল– স্পটলাইটগুলো নিভিয়ে দাও। দ্য লাইট ইজ আউট!