মহাশিবরাত্রির রাতে ওরা আদিবাসী মেয়েটিকে ফেলে রেখে গেল ইছামতি সেতুর নীচে।

কুশমন্ডি অপারেশন

তমাল সাহা

মেয়েটি যখন বলছিল তখনও তার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। মেয়েটি বলছিল, শিবরাত্রি করলে কি হয়? সে সম্বন্ধে অনেক কথাই শুনেছিলুম, তা বেমালুম মিথ‍্যে হয়ে গেল আজ রাতে— কুশমন্ডি অপারেশন হল আজ।

আমি আদিবাসী মেয়ে। ত্রিশটি বছর পেরিয়ে এলুম।তিরিশবার পৃথিবী ঘুরে গেল সূর্যকে মাঝে রেখে। আমিও পাক খেতে থাকি ভারতভূমিতে।

আমার তো কেউ নেই। আমি থাকি একাকী এবং একা— দেহাবন্ধ, হাটপাড়ায়।থানা কুশমন্ডি। জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর। বিয়ে আমারও হয়েছিল বিহারে। মেয়েদের তো বিয়ে হওয়ার জন্যই জন্ম হয়। না হলে পেটে বাচ্চা নেবে কে? তাও আবার ছেলের বাচ্চার জন্ম দিতে হবে। ছেলেদের পেট আমাদের চেয়ে বড় হলে কি হবে,বাচ্চা নেবার ক্ষমতা তো ওদের নেই! সুতরাং আমাদেরই বাচ্চা নেবার একমাত্র অধিকার।

আমি নাকি পাগলি। আমার স্বামী শ্বশুর ! সে অনেক অত্যাচারের কাহিনী। ফিরে এলাম বাপের বাড়ি। মা-বাবা? সে তো কবেই গিয়েছে মরে। তাও বছর পনেরো পার হয়ে গেল।

প্রতিরাজ গ্ৰাম। নামটি খুব সুন্দর,তাই না? শিবরাত্রির মেলা হচ্ছিল সেখানে। ধর্ম বলে কথা! এটা আবার মেয়েদের পুজো। উপোস থাকতে হয়। শিবের মত স্বামী- বর পাবার সে এক কান্ডকারখানা! দুধ,বেল, ধুতরোর গোটা,আকন্দ-নীলকন্ঠ ফুলের মালা,কত কী যে লাগে!

নীলকন্ঠ সে এক বিশাল নাম। আচ্ছা স্বামী থেকে আসামি,বর থেকে বর্বর শব্দদুটি এসেছে নাকি? আমি অবশ্য ওসবের মাথায় জল বা দুধ ঢালতে যাইনি,গিয়েছিলুম মেলা দেখতে। মেলায় গিয়েই ঝামেলা হয়ে গেল। বর্বরেরা তুলে নিল। তারপর হায়নার দল চেটেপুটে খেল আমাকে। বুকের উপর দাঁত নখ, সে এক হিংস্র খেলা। তলপেটে উদ্দাম নৃত্য আর আমার আর্তনাদ। জন্মস্থান ভেদ করে বেরিয়ে এলো দুমিটার অন্ত্রনালী আর বয়ে যেতে লাগলো প্রবল রক্তস্রোত।

ইছামতি সেতুর নীচে ফেলে রেখে গেল ওরা আমাকে। হায়নার কামড় বসানো ফালাফালা আমার শরীরটাকে। আঠারো ঘন্টা পর এক চাষাভুষো মানুষ দেখতে পেল আমায়।

চাষাভুষো মানুষই তো সীতাকে চেনে,চেনে আদিবাসী নারীকে। সে আমাকে নিয়ে চললো এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল।সার্জেন বললেন, আবিষ্কার হয়েছে যৌনাঙ্গ ও ধাতব দণ্ড নিয়ে এক ভয়ার্ত খেলা। তলপেটের নীচে দুবার অপারেশন হয়েছে আমার। এতদিন ছিল পেট নিয়ে লড়াই, এবার শুরু হল তলপেটের সংগ্ৰাম। ক্ষুধা নিবৃত্তি আর ক্ষত নিরাময়–এই দুই যুদ্ধে আমি এখন একাকার।

সার্জেন বললেন দুবার অপারেশন করতে বাধ্য হলুম। নাহলে পচন ধরে যেত‌। ধর্ষণ কর্মটি করবার পর ওরা লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়েছিল আমার যৌনাঙ্গে।

আসল পচন ধরেছে কোথায়,তা কি সার্জেন জানেন? আঠারো ঘন্টা পড়ে ছিলাম মাটিতে,অহল্যা জমিতে জানিনা,পুরো ন্যাংটো শরীরে। তোমাদের ভাষায় নগ্ন দেহে। আদিবাসী মেয়ে, সেতো বেহায়া,তার আবার লজ্জা- শরম আছে নাকি? ন্যাংটো,নগ্ন, উদোম, উলঙ্গ শব্দে তার কি আসে যায়!

জয়! শিবরাত্রির জয়! বলে জ্ঞান হারিয়েছিলুম আমি।