অবতক খবর,১২ এপ্রিল: বিশ্বব্যাপী মারণযজ্ঞ সূচিত হয়েছে করোনা নামক মহামারি। সমগ্র বিশ্বকে আজ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে এই কোভিড-১৯। রাজ্য সরকার এই মহা বিপর্যয়কালে বুঝতে পেরেছেন যে, এরজন্য খাদ্য সংকট আসন্ন এবং বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের পেটের দানাপানি জোগাড় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

এই বিষয়টি উপলব্ধি করে রাজ্য সরকার নির্দেশ জারি করেছে, যাদের রেশন কার্ড নেই তাদের মধ্যে সুচারুভাবে খাদ্য বণ্টনের জন্য টোকেন বিলি করা হবে। সেইসঙ্গে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে,এই টোকেন বিলি বন্টনের ব্যাপারে কোনরকম দলীয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না। মানুষের স্বার্থে, সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে প্রশাসনিকভাবে এই টোকেন বন্টন করা হবে। এমনকি এই টোকেন বিলি বন্টনের মূল দায়িত্বে থাকবেন জেলা শাসক।

তিনি আরো জানিয়ে দিয়েছেন, পৌরসভার পৌরপ্রধান নয়, এর মূল দায়িত্বে থাকবেন এক্সিকিউটিভ অফিসার। কারণ মনে করা হয়েছে চেয়ারম্যান নাগরিক প্রতিনিধি এবং মহানাগরিক হলেও তিনি একজন দলীয় ব্যক্তি। সুতরাং রাজ্য সরকার চান না এতে কোনো দলীয় মাতব্বরি থাকুক। ‌ সেইমতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ইও-র নেতৃত্বে পৌর কর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাদের নামে টোকেন নির্ধারিত হয়েছে সেই টোকেন বিলিবণ্টন করে আসবেন তাদের বাড়িতে গিয়ে। এখানে পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে যে, এই টোকেন সংগ্রহ করার জন্য গ্রাহককে কোনমতেই পৌর দপ্তরে বা কোন রাজনৈতিক মাতব্বরের কাছে যেতে হবে না বা তদ্বির করতে হবে না। পৌর কর্মীরাই সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নির্দিষ্ট গ্রাহককে তার টোকেনটি দিয়ে আসবেন।

ইতিমধ্যেই কাঁচরাপাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এইসমস্ত টোকেনের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সঞ্জীব সাহা। অভিযোগ তিনি টোকেন বিলি বন্টনের ব্যবস্থা করছেন স্থানীয় মিলনী ক্লাবের সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে। সেখানে যে তালিকা এসেছে তাতে অভিযোগ, কে সিপিএম, কে তৃণমূল,কে কংগ্রেস,কে বিজেপি এইরকম বাছাই পর্ব চলছে। এই নিয়ে ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা ক্ষুব্ধ। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, পৌরকর্মীরা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে যেটি বিলি বন্টন করবেন সেখানে কাউন্সিলর সঞ্জীব সাহা তার দায়িত্ব পেলেন কিভাবে? এতে তারা ক্ষুব্ধ এবং এই নিয়ে বচসা এবং গন্ডগোল শুরু হয়। গন্ডগোল সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে উপস্থিত হয়।

পুলিশের সামনেই সঞ্জীব সাহা জানান যে, পৌরপ্রধান সুদামা রায় তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সেই নির্দেশ অনুসারেই তিনি এই কাজে হস্তক্ষেপ করেছেন।
এদিকে পৌর প্রধান সুদামা রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন যে, কাউন্সিলর সঞ্জীব সাহা মিথ্যে কথা বলছেন। আমি তাকে বলেছিলাম প্রয়োজনবোধে পৌরকর্মীদের সাহায্য করতে, যাতে নির্দিষ্ট ঠিকানা তারা না খুঁজে পেলে তিনি যেন সেটি দেখিয়ে দেন এবং নির্দিষ্ট গ্রাহককে শনাক্ত করে দেন। কিন্তু তার নামে যে অভিযোগ আসছে, এই বিলিবন্টন ব্যবস্থার সঙ্গে তিনি জড়িয়ে গিয়েছেন,এটা আমি জানি না।

অন্যদিকে সঞ্জীব সাহা জানান, ঘটনাটির পেছনে চক্রান্ত রয়েছে।এক তৃণমূল নেতার মদতে এই বিক্ষুব্ধ অভিযোগকারীরা নিজেদের হাতে এই বিলিবন্টনে কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছিলেন। সেটি করতে সক্ষম না হওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে বদনাম করতে চাইছেন!

অর্থাৎমুখ্যমন্ত্রী যে কঠোর নির্দেশিকা জারি করেছেন এই টোকেন বিলি বন্টনের ব্যাপারে দলীয় কোনরূপ হস্তক্ষেপ থাকবে না,এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ভাবে পৌর কর্মীরাই বিলিবন্টন করবেন,দেখা যাচ্ছে সেটি অমান্য করা হয়েছে। সেখানে তৃণমূল দলের নেতা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সেই বণ্টনে মাতব্বরি করছেন। ফলে কাঁচরাপাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিকরা বিক্ষুব্ধ।

তারা চাইছেন এতে কোনমতেই যেন স্থানীয় কাউন্সিলর নাক না গলাতে পারেন, যেখানে জনগণ, সাধারণ মানুষের স্বার্থ জড়িত। যদি তাতে কাউন্সিলর সঞ্জীব সাহা হস্তক্ষেপ করেন তবে তাতে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবে এবং তা দলীয় সংকীর্ণতার পরিচয় হবে এবং পরোক্ষে এটা তৃণমূল দল তো বটেই তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীরও অপমান। কাউন্সিলর এই সাহসটি কোত্থেকে পেলেন,এই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে।