অবতক খবর,৩১ জানুয়ারি : শিক্ষার মান এখন কোন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে তা বোঝা মুশকিল। এখন সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলের মধ্যে ফারাকটা খুব স্পষ্ট। কোন কোন সরকারি স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকা সত্ত্বেও সেখানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কম। এখন মানুষের ঝোঁক বেসরকারি স্কুলের দিকে। সকলেই চান তারা তাদের সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে। ভালো শিক্ষা,ভালো পরিবেশ বলতে বেশিরভাগ অভিভাবক এখন বেসরকারি স্কুলের দিকেই ঝোঁকেন।

কিন্তু কিছু কিছু বেসরকারি স্কুলে চলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর রীতিমত অত্যাচার। পড়াশোনার নামে কিছু কিছু বেসরকারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর অত্যাধিক চাপ সৃষ্টি করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের উপর শুধু পড়াশোনার চাপ নয়, অভিভাবকদের উপরও নানা রকমের চাপ থাকে বেসরকারি স্কুলের তরফে। যেমন অত্যাধিক স্কুল ফি, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের মধ্যে কমিউনিকেশন গ্যাপ, মাঝে মাঝে তো শোনা যায় অভিভাবকরা কোন অভিযোগ জানাতে গেলেও দুর্ব্যবহার করা হয় স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে। কিন্তু সবকিছুকে একপাশে রেখে অভিভাবকরা সব সময়ই চান যে, তাদের সন্তানরা যাতে ভালো শিক্ষা পায়। তাদের ভবিষ্যৎ যেন ভালো হয়। আর সেই জন্যই হয়তো স্কুল কর্তৃপক্ষের সমস্ত অন্যায় তারা মাথা পেতে নেন।

তবে এই বেসরকারি স্কুলগুলির মধ্যে এমন কিছু কিছু স্কুলও রয়েছে যারা ভাবে যে তারাই সর্বেসর্বা। বিগত দিনেও এমন বেশ কিছু ঘটনা উঠে এসেছে যেখানে দেখা গেছে স্কুলের ভাবখানা এমন,’আমরা যা খুশি তাই করব, তাতে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না।’

কাঁচরাপাড়ার একটি নামী বেসরকারি স্কুল হলো কাঁচরাপাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, যেটি বাগমোড় সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থিত। বিগত দিনেও বিভিন্ন কারণে এই স্কুল বারংবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। আর এবারও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনার কারণে এই স্কুল ফের শিরোনামে উঠে এলো।

এই কাঁচরাপাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ডাইরেক্টর রাহুল চৌধুরী। ডাইরেক্টর রাহুল চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে একজন অভিভাবিকা অভিযোগ দায়ের করলেন হালিশহর থানায়।

অভিযোগ,গত ১৮ই জানুয়ারি কাঁচরাপাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নবম শ্রেণী এবং একাদশ শ্রেণীর দুই ছাত্রের মধ্যে কোন বিষয় নিয়ে গন্ডগোল হয়।

হালিশহর খাসবাটির বাসিন্দা পরিমল কুন্ডু এবং পম্পা কুন্ডুর পুত্র রুদ্র কুন্ডু কাঁচরাপাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র। রুদ্র কুন্ডুর সাথে গত ১৮ই জানুয়ারি গন্ডগোল বাঁধে ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণীর এক ছাত্রের সাথে।

এই ঘটনার অভিযোগ তার পরের দিন অর্থাৎ ১৯শে জানুয়ারি রুদ্র কুন্ডুর মা পম্পা কুন্ডু স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানাতে যান।

পম্পা দেবীর অভিযোগ, ডাইরেক্টর রাহুল চৌধুরী অভিযোগ শোনার পরে ওই দিনই রুদ্র কুন্ডুর ক্লাসরুমে গিয়ে সকলের সামনে রুদ্র কুন্ডুকে মাটিতে ফেলে মারেন।

এই মর্মে পম্পা দেবী অভিযোগ করে বলেন, “স্কুলের ডাইরেক্টর একজন ছাত্রকে যে এইভাবে মারতে পারেন তা সকলের কল্পনার বাইরে। পশুর থেকেও বিশ্রীভাবে রাহুল চৌধুরী তাঁর ছেলেকে মেরেছেন। তিনি শিক্ষক নন, তিনি একজন স্কুলের ডাইরেক্টর। কিভাবে তিনি একজন ছাত্রের গায়ে এভাবে হাত দিতে পারেন? এমনকি মারতে মারতে লাঠি ভেঙে ফেলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, রুদ্র কুন্ডুর ওপর চলে লাথি ঘুষি চর। যদি আমি একটি কথাও মিথ্যা বলে থাকি তবে ওইদিনের ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেই সবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এত মেরেও ক্ষান্ত হননি তিনি। রুদ্রর বাবাকে ফোন করেন এবং রুদ্রকে ক্লাস রুম থেকে বাইরে বার করে দেন। পাশাপাশি রুদ্রর বাবাকে এও জানানো হয় যে, রুদ্রকে আর এই স্কুলে রাখা হবে না। ”

এখন পম্পা দেবী প্রশ্ন তুলেছেন, “এইভাবে কি কোন ছাত্রের ভবিষ্যৎ নষ্ট করা যায়? একজন স্কুল ডাইরেক্টর কিভাবে এই কাজ করতে পারেন?”

পাশাপাশি পম্পা দেবী এও বলেন,”আমার ছেলে অন্যায় করে থাকলে তিনি তাকে মেরে শাস্তি দিলেন। তারপরেও তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হল! শুধু তাই নয়, ডাইরেক্টর রাহুল চৌধুরী ফোন করে হুমকি পর্যন্ত দেন যে, ‘এমন লিখে দেবো আর কোন স্কুলে রুদ্র ভর্তি হতে পারবে না।’

গত ১৯শে জানুয়ারির ঘটনা এটি। আজ ৩১শে জানুয়ারি। রুদ্র এখনো স্কুল যেতে পারছে না। উপরন্তু আমার ছেলে রুদ্রকে যেভাবে মারা হয়েছে তার চশমা ভেঙে ফেলা হয়েছে,এখন সে গুরুতর অসুস্থ।”

এই গোটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কাঁচরাপাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ডাইরেক্টর রাহুল চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে হালিশহর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন রুদ্র কুন্ডুর মা-বাবা পম্পা কুন্ডু এবং পরিমল কুন্ডু।

পাশাপাশি পম্পা দেবী পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন,”থানায় অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত আমরা কোন সুরাহা পাইনি।”

পম্পা দেবী আরো বলেন,”এই রাহুল চৌধুরী যিনি আমার ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে তার উপযুক্ত শাস্তি চাই।”

কাঁচরাপাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিরুদ্ধে এর আগেও নানারকম অভিযোগ উঠেছে।

বারংবার একটি স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তবুও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। একের পর এক কারণের জন্য শিরোনামে উঠে আসছে এই স্কুলটি।

তবে পম্পা দেবী প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যে,”ছেলের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয় এবং ছেলে যাতে ফের স্কুল যেতে পারে সেই ব্যবস্থা যেন প্রশাসন করে। পাশাপাশি আগামীতে রুদ্রকে যাতে আর কোনো গন্ডগোলের সাথে না জড়িয়ে দেওয়া হয় সেই দায়িত্বও প্রশাসনকে নিতে হবে।”

অন্যদিকে স্কুলের অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরা জানাচ্ছেন,”পূর্বে যিনি প্রিন্সিপাল ছিলেন তিনি অত্যন্ত ভালো ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর রাহুল চৌধুরী দায়িত্ব নিয়েছেন স্কুলের। আর তারপর থেকেই একের পর এক গন্ডগোলের সৃষ্টি হচ্ছে।”

পম্পা দেবী বলেন,”আমার ছেলেকে যেভাবে মারা হয়েছে, আমাদের যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে পরবর্তীতে আমার ছেলে রুদ্রর যদি কিছু হয়, তার ভবিষ্যত যদি নষ্ট হয় তবে তার দায় রাহুল চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রীকেই নিতে হবে। সকলের সামনে আমাদের যেভাবে অপমানিত করা হয়েছে তার ব্যবস্থা আমি নেব। এই রাহুল চৌধুরীর বাড়বাড়ন্ত আমরা বরদাস্ত করব না। আজ যদি আমরা এর বিরোধিতা না করি তবে যে ঘটনা আমার ছেলের সাথে ঘটেছে পরবর্তীতে অন্য কারোর সাথে ঘটতে পারে।”

এই ঘটনা নিয়ে প্রশাসন কি ব্যবস্থা নিয়েছে বা কি পদক্ষেপ নেবে, সেই দিকটিও নজরে রাখছি আমরা। চোখ রাখুন অবতক খবরে।