কাঁচরাপাড়ার বেশ কিছু ব্যবসায়ী লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে,দুবেলাই তারা দোকান খোলা রাখছে

অবতক খবর,১৭ এপ্রিল: আজ শহর ঘুরে দেখা যায় যে সকালেই থানা মোড় অঞ্চলে বেশ কয়েকটি দোকান খুলে গেছে। দশকর্মার দোকান, স্টেশনারি দোকান, বইয়ের দোকান খোলা রয়েছে। বইয়ের দোকানের মালিককে প্রশ্ন করা হয়, অনলাইনে তো পড়াশোনা হচ্ছে। আপনার দোকান খোলার কারণ কি? আপনার কাছে কি অনুমতি আছে? তিনি বলেন, এখন পরীক্ষা চলছে। মানুষ বই কিনতে আসছেন। তাই আমরা দোকান খোলা রেখেছি।

অন্যদিকে রোডের উপর যে সমস্ত হোটেলগুলি আছে সেই সমস্ত হোটেল খোলা হয়ে গেছে এবং অনলাইনে তারা খাবারের অর্ডার নিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে তাতে যে ভিড় হচ্ছে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মানা হচ্ছে না, কমিউনিটি কন্টাক্টের সম্ভাবনা রয়েছে। এটা কিছুতেই তারা মানছে না।

এ বিষয়ে কাঁচরাপাড়া পৌরসভার পৌর প্রধান সুদামা রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই সমস্ত দেখার দায়িত্বে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তারা কি করছে আমি জানিনা। এটা পৌর প্রশাসনের দায়িত্বে নেই। ‌ পৌর প্রশাসন এভাবে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ, পুলিশ প্রশাসনও তাদের দায়িত্ব পালন করছে না।

‌অর্থাৎ কাঁচরাপাড়ায় যে করোনা সংক্রমণ ছাড়ানোর একটা সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে এটা অনুমান করা যাচ্ছে। কারণ লকডাউন কঠোরভাবে কেউ মানছেন না। অন্যদিকে অনেক পথচারীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, এখানে তো এখনো কোন সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি, করোনা এখানে এতদূর আসবে না। তাই তারা মানছেন না এবং তার গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
তাহলে যদি করোনার সম্ভাবনা থাকত তাহলে পৌর প্রশাসন এবং থানা প্রশাসন নিশ্চিত ভাবে এটার উপর সক্রিয় নজরদারি করতেন।

দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কথাই‌ সঠিক তারাও সেই ভাবে নজরদারি করছেন না।

অদ্ভুত রকম একটা অরাজক অবস্থা চলছে। কাঁচরাপাড়ার এই পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কেউ আছে কিনা রাজনৈতিকভাবে, পৌর প্রশাসনিকভাবে এবং থানা প্রশাসনিকভাবে সেটা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে অনলাইনে মদ বেচাকেনা চলছে,এই বলে ফেসবুকে যোগাযোগের কয়েকটি ফোন নাম্বার দেওয়া হয়েছে। সেই নম্বরে টাকা পেমেন্ট করে প্রতারিত হয়েছেন অনেকেই। তারা টাকা ফেরত পাননি এবং মদও পাননি। এমনই বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে আমাদের কাছে।ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমাগত ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তা ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রেই জানা গেছে। কমিশনার জানিয়েছেন, অনেক অনুনয় বিনয় করা হয়েছে, অনেক হাতজোড় করা হয়েছে। এবার লকডাউন অমান্য করা হলে প্রথমে রুলের বারি, তারপর গ্রেপ্তার করবে পুলিশ। বাইক বাহিনীদের গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং আদালত না খোলা পর্যন্ত সেই গাড়ি পাওয়া যাবে না।

সূত্রের খবর, লকডাউনের নিয়ম ভঙ্গ করার বিরুদ্ধে ব্যারাকপুর মহকুমা থেকে ৬৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন ৩২জন। ইতিমধ্যে আটটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে যে সমস্ত বাজার রয়েছে তার দিকে পুলিশ প্রশাসনের নজর রয়েছে। ব্যারাকপুরের ২৬টি বাজার ঘিঞ্জি এলাকায় থাকায় ইতিমধ্যেই সেগুলো স্থানান্তরিত করা হয়েছে এবং বিশেষভাবে কাঁচরাপাড়া থেকে বরানগর, দমদম থেকে ব্যারাকপুরের যে ঘিঞ্জি বাজারগুলি আছে যেগুলো অন্যত্র সরানো যাচ্ছ না, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর।

জুটমিল খোলা হবে। খুললেও তাতেও স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে কাজ করা হবে এবং করোনা সংক্রান্ত নির্দেশকে মান্যতা দিতে হবে।

ব্যারাকপুর অঞ্চলে এই যে নজরদারি চলছে তার থেকে কাঁচরাপাড়া বাদ পড়েছে কিনা এ নিয়ে বীজপুর অধিবাসীদের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে। কারণ সব জায়গায় গ্রেপ্তার হলেও এই অঞ্চলে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, কেন পুলিশ কঠোর হচ্ছে না এ ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

 

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন বিনামূল্যে রেশনের চাল ১০ শতাংশ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি এবং তিনি ঘোষণা করেছেন যে পার্টির নামে চাল বিলি নয়। অর্থাৎ পরোক্ষে তিনি স্বীকার করছেন যে পার্টির নামে চাল বিলি চলছে। অর্থাৎ এই বিপর্যয় কালেও মানুষের খাদ্য নিয়ে রাজনীতি চলছে। এটা তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য যে, কাঁকিনাড়া-ভাটপাড়া অঞ্চলে যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বা সংক্রমণের বিষয়টি কি সেই সমস্ত বিষয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিউজ মিডিয়া, সংবাদপত্র কোন কিছুই মানুষের সামনে তুলে ধরছেন না। এই কারণে ব্যারাকপুর অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটি ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন জেলা শাসক সুপারদের অর্থাৎ জেলা প্রশাসকদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ছিলেন। উত্তর ২৪ পরগণাতে করোনার প্রকোপ বিষয়ে জেলা শাসককে মুখ্যমন্ত্রীর কোপে পড়তে হয়েছে। অবহেলার দায় তিনি এখন আধিকারিকদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।‌এখন তিনি রেড অ্যালার্ট জারি করতে চাইছেন। তিনি বলেছেন, আর নয়, অনেক হয়েছে। এবার প্রয়োজনে সশস্ত্র পুলিশ নামবে। মুখ্যমন্ত্রী রেড জোন,রেড স্টার,হটস্পট এসব ধারণা এতোদিন উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের জানিয়ে দিয়েছেন, ‘সাতদিনের মধ্যে রেড জোনকে অরেঞ্জ জোনে ফেরাতে হবে। সাত দিনের মধ্যে আইওয়ান্ট রেজাল্ট।’ জোনের কথা তিনি এতোদিন মানছিলেন না। ১২ এপ্রিল হটস্পটের ধারণাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

আজ তিনি এমনই আক্রমণাত্মক ছিলেন যে তিনি বলেন, ‘আমি রোজ বলতে পারব না।প্লিজ ওয়ার্ক আগ্রেসিভলি।’
যাই হোক,আমাদের মনে হয়,ইট ইজ বেটার লেট দ্যান নেভার।

তবে চরম সতর্কতার স্বার্থে অধিবাসীদের জানানো হচ্ছে যে, মে- মাসের গোড়াতেই সংক্রমণ তুঙ্গে উঠবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।