অবতক খবর : আজ শতাব্দী প্রাচীন ১০২ বছরের পুরনো কাঁচরাপাড়া পৌরসভার নব উদ্বোধন হলো। উল্লেখ্য, কাঁচরাপাড়া পৌরসভা ১লা অক্টোবর ১৯১৭ সালে স্হাপিত হয়েছিল ব্র্যাডলে রোডে, বর্তমানে যা নেতাজি সুভাষ রোড নামে পরিচিত সেই রোডে।‌ প্রাক স্বাধীনতাকালে এই পৌরভবনটি ছিল রেলওয়ে এলাকায়। রেলওয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন নেলসন বিল্ডিংয়ে। ‌পরবর্তীতে ব্র্যাডলে রোডে উঠে আসে। তৃতীয় পর্যায়ে এই পৌরভবন উঠে আসে ৪২ নং লেনিন সরণিতে। প্রায় বিশবছর এখানে অতিবাহিত করার পর সেই পুরনো হেরিটেজ বিল্ডিংকে নব সংস্কার করে এই নতুন বিল্ডিংয়ে উঠে এলো কাঁচরাপাড়া পৌরসভাটি। অর্থাৎ পৌরসভাটির নতুন সংস্করণ রূপ হল এটি।

এই পৌরসভার দ্বারোদঘাটনের সঙ্গে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের জোনপুর অঞ্চলে শতবর্ষ স্মারক প্রায় ২৫ ফুট উচ্চ তোরণ দ্বার, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে কবি রবীন্দ্র উদ্যান এবং নতুন ডিজাইনে পৌরসভার ওয়েবসাইট–এর পর্যায়ক্রমিক উদ্বোধন আজ অনুষ্ঠিত হয়। আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেনপৌর প্রধান সুদামা রায় এবং স্বাগত ভাষণ দেন উপ পৌরপ্রধান মাখন সিনহা। উপস্থিত ছিলেন সমাজকর্মী সুবোধ অধিকারী,দীপ মজুমদার, কার্যনির্বাহী অধিকারিক ও অর্থ অধিকারিক।

এদিন পৌরকর্মী গার্গী ভট্টাচার্য্য ভাদুড়ী ‘আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি’ এই রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন।

পরবর্তীতে পৌরসভা সম্পর্কিত সমস্ত পুরাতন তথ্য এবং পৌরসভার বিশেষ বৈশিষ্ট্য এবং কেন এই পৌরসভা উল্লেখযোগ্য সে বিষয়ে প্রারম্ভিক মুখপাত ঘটিয়ে দেন সঞ্চালক তথা পৌর তত্ত্বাবধায়ক দেবাশিস রায়।

পরবর্তীতে পৌরসভা তাঁর আমলে এই নতুনভাবে রূপায়িত হয়েছে বলে গর্ব এবং আনন্দ প্রকাশ করেন পৌর প্রধান সুদামা রায়, সভাপতির ভাষণে তিনি এই বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘পৌরসভা মানুষের জন্য, মানুষের পরিষেবায় কাজ করবে।’

প্রধান অতিথি এবং উদ্বোধক হিসেবে দীনেশ ত্রিবেদী,তাঁর বক্তব্যে বলেন,’একদম সঠিক তথ্যই দিয়েছেন সুদামা রায়। এটা তার নিজের কৃতিত্ব নয়, বোর্ড অফ কাউন্সিলরদের সম্মিলিত কৃতিত্ব। আমি আরো আগ বাড়িয়ে বলছি,এর কৃতিত্ব হচ্ছে কাঁচরাপাড়া শহরবাসী, পৌর কর্মী এবং বোর্ড কাউন্সিলরদের। জনগণের আগ্ৰহ, ইচ্ছা ব্যতীত এমন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ হতে পারে না।’

স্বাগত ভাষণে উপ পৌরপ্রধান এমন একটি পৌরসভা জনগণের সামনে উপহার দিতে পারার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।‌ এটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রাপ্য বলে তিনি মনে করেন।
টাউন হলও অতি দ্রুত তৈরি হয়ে যাবে বলে জানান সুদামা রায়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমস্ত কাউন্সিলর, পৌর কর্মী এবং সাধারণ মানুষ।

রেল আমল থেকে আজ পর্যন্ত যে সমস্ত ব্যক্তিত্বরা এই পৌরসভার পৌরপ্রধান হয়েছেন,যেমন উইলিয়াম হার্নেট,মিঃ স্পল্ডিং, মিঃ ব্র্যাডলে সাহেব। অন্যদিকে রাসবিহারী শাস্ত্রী, অমূল্য উকিল হয়ে এই পৌরসভার ২৪তম পৌর প্রধান সুদামা রায় একথা জানিয়ে দেন সঞ্চালক দেবাশিসরায়। তিনি বলেন,’এই শহরে পদার্পণ করেছেন ভারতবর্ষের তিনজন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী। তিনি বলেন,’এই পৌরসভার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অনাথ বন্ধু রায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কালিপদ মুখার্জী। উল্লেখ্য, অনাথ বন্ধু রায় কাঁচরাপাড়া কাঞ্চন পল্লী তাঁর আদি নিবাস। এই কাঁচরাপাড়া পৌরসভার পৌরকর্মাবলী নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন প্রখ্যাত কথাকার সমরেশ বসু। তথ্য সংগ্রহে তিনি কাঁচরাপাড়া পৌরসভায় এসেছেন। এই পৌরসভায় পদার্পণ করেছেন তৎকালীন সেচ মন্ত্রী অজয় মুখার্জী। এই পৌরসভার টাউন হল নির্মাণের প্রথম ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছেন তৎকালীন পৌর মন্ত্রী প্রশান্ত সুর। এখানে জনস্বাস্থ্য পরীক্ষা ভবন উদ্বোধন করে গিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্থ দে। পৌর ক্রীড়া ময়দানে ভাষণ দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী সত্যসাধন চক্রবর্তী।এই শহরের সঙ্গে জড়িত মোনা দত্ত,অনিল‌ গড়গড়ির মত ক্রীড়াবিদ। আর বিপ্লবী বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি তো এই বীজপুরে প্রথম বিধায়ক। পৌর উন্নয়নে তাঁর ব্যতিক্রমী ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা, এই শহরে পদার্পণ করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ ও কবি নজরুল ইসলাম। বিবেকানন্দরএকটি পূর্ণাবয়ব মূর্তি কাঁপা মোড় অঞ্চলে স্থাপন করেছে এই পৌরসভা।

এই পৌরসভা নাগরিক
সংবর্ধনা দিয়েছে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্ত কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্য্য ও স্বনামধন্য এশিয়ান অ্যাথলেট জ্যোতির্ময়ী সিকদারকে।

পৌরকর্মীদের সম্মিলিত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।