অবতক খবর,২ মার্চঃ কল্যাণী শহরে বর্তমান এবং প্রাক্তন সভাপতির গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চরমে। এবার তা চলে এলো প্রকাশ্যে। একদিকে রয়েছেন বর্তমান সভাপতি বিপ্লব দে(সজল), অন্যদিকে রয়েছেন প্রাক্তন সভাপতি যিনি দীর্ঘ বছর শহরের দায়িত্ব সামলে এসেছেন অরূপ মুখার্জী (টিঙ্কু)। এই দু’জনের লড়াই এখন সর্ব সমক্ষে চলে এসেছে।কারণ এতদিন তাদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল। কিন্তু গতকালের ঘটনার পর তা চরমে উঠেছে।
মূলত এটি ক্ষমতা এবং দখলদারির লড়াই।

এতদিন বর্তমান সভাপতি বিপ্লব দে (সজল) বসতেন রথতলার একটি কার্যালয়ে। গত ২৬শে আগস্ট কল্যাণী আইটিআই মোড়ে যে ক্লাব রয়েছে সেই ক্লাবে বিপ্লব দে দায়িত্ব পাওয়ার পর অরূপ মুখার্জী নিজেই তাঁকে ওই ক্লাবে বসিয়েছিলেন।

কিন্তু বর্তমানে প্রাক্তন সভাপতি টিঙ্কু মুখার্জী সেই পার্টি অফিসকে একটি সাধারণ ক্লাব বলছেন।
যেখান থেকে পরিচালিত হয় ‘আপনজন’, পাশাপাশি পরিচালিত হয় লুমিনাস ক্লাবের পুজো।

কিন্তু প্রাক্তন সভাপতির অভিযোগ, বর্তমান সভাপতি নাকি সেই ক্লাবকে দখল করে নিয়েছেন।

টিঙ্কু মুখার্জী আরো অভিযোগ করেন,২০১৯-এর পর বিজেপি যেভাবে আমার ক্লাব দখল করতে এসেছিল, ভাঙচুর করেছিল,বাইক বাহিনী যেভাবে তান্ডব করেছিল তা শহরবাসী মেনে নিতে পারেননি। আর সেই কারণেই ২০২১ সালে পুনরায় আমাদের ক্ষমতায় এনেছেন মানুষ। কিন্তু মনে হচ্ছে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তবে এবারেও এই শহরের মানুষ এইসব মেনে নেবেন না। কারণ মানুষ সবকিছু দেখছেন। যারা টাউন তৃণমূল কংগ্রেসে রাজনীতি করে তারা সকলেই চেষ্টা করেন মানুষকে নিয়ে চলার। আর আমি মানুষের পাশে রয়েছি, মানুষ আমাকে ভালোভাবে চেনেন। সুতরাং আমার কোন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই।

অন্যদিকে টিঙ্কু মুখার্জীর কথা অনুযায়ী যে,এটি পার্টি অফিস নয়,বরং একটি ক্লাব। তাঁর অভিযোগ,সেটিই গতকাল দখল হয়ে গেল সজলের ছেলেদের দ্বারা।

এ নিয়ে টিঙ্কু মুখার্জী আরো বলেন,আমি প্রথমে শুনলাম বিজেপি আমার ক্লাব দখল করে নিয়েছে। হঠাৎ করে দেখি ২০১৯ সালে যারা ভাঙচুর করেছিল,যারা সেখানে থুতু ফেলেছিল তারাই আবার থুতু চাটতে এসেছে।

অন্যদিকে সজল বাবুর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন,টিঙ্কু বাবু বলছেন এটি ক্লাব। কিন্তু এটি ক্লাব নয় বরং পার্টি অফিস। এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। এছাড়াও রয়েছে তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন নেতা নেত্রীদের ছবি। তাহলে তিনি কিভাবে এটাকে ক্লাবে বলতে পারেন! হয়তো প্রাক্তন সভাপতির শরীর অথবা মন খারাপ হয়েছে হয়তো,সেই কারণেই তিনি এই ধরনের কথা বলছেন। কিন্তু তিনি যেহেতু আমার দলের সভাপতি তাঁকে সম্মান জানিয়ে আমি বলতে চাই যে,ওই পার্টি অফিসটি তিনি নিজেই আমাকে হস্তান্তর করেছিলেন গত ২৬শে আগস্ট। প্রমাণ স্বরূপ আমার কাছে তার ছবিও রয়েছে। আর তিনিই এখন এইরকম কথা বলছেন। তবে আমরা এইটুকু জানি,পঞ্চায়েত নির্বাচন আসন্ন। ফলত আমাদের সক্রিয় থাকতে হবে এবং জয়লাভ করতে হবে। কারণ সকলেই জানেন ২০২১-এর ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণেই দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছ। সুতরাং দলকে আমার জেতাতে হবে। যদি আমি তা না করতে পারি তবে হয়তো আমিও থাকব না। আমার জায়গায় অন্য কেউ সভাপতি হবেন। তবে আমাকে আমার এই জায়গা ধরে রাখতে হবে। শহরবাসী সবকিছুই জানেন। কিন্তু যেদিন তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস ছিল। হাজার হাজার মানুষ আমার এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সমাজের বিশিষ্টজনেরা আমার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। একে অপরের সঙ্গী হয়ে আমরা এই দিবস পালন করেছিলাম। তাহলে তিনি কিভাবে বলছেন যে, শহরবাসী আমার সাথে নেই। তিনি হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না যে কি করবেন। তবে এই তৃণমূল কার্যালয় থেকেই দলের কাজকর্ম পরিচালনা হবে, এখান থেকেই সব কাজ হবে।

অন্যদিকে বর্তমান এবং প্রাক্তন সভাপতির এই লড়াই নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে বিরোধী দল বিজেপি। তারা বলছেন, তৃণমূল নিজেরাই যদি এভাবে লড়তে থাকে তাহলে আগামীতে নির্বাচন আমাদের জন্য আরো সহজ হয়ে উঠবে। তবে এই লড়াই আজকের নয়, দীর্ঘদিনের। তারা কি করবেন আর কি করবেন না সে নিয়ে আমরা কোন মন্তব্য করব না। আমরা জানি ২০২৪-এ বিজেপি আবার ক্ষমতা দখল করবে এই কল্যাণী শহরে এবং ২০২৬-এও আমরাই থাকব।