অবতক খবর, সংবাদদাতা, হাওড়া :: করোনা আবহে কর্তব্যরত নার্সদের আবাসনে জলের হাহাকার। অত্যন্ত দুরবস্থার মধ্যে রয়েছেন আবাসিক নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা। নেই নূন্যতম কোভিড বিধি পালনের পিরিস্থিতি।

হাওড়ার বেলুড় ই এস আই হাসপাতালের পিছন দিকে রেয়েছে স্টাফ নার্স কোয়ার্টার। সেখানে চারতলা কোয়ার্টারগুলির ৬ টার মধ্যে পাঁচটি বসবাসযোগ্য। আবার সেগুলির একতলা হয়ে উঠেছে বসবাসের অযোগ্য। কার্যত একে আবাসন বলা ভুল। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই আবাসন। ৫ তলা এই আবাসনের একতলা ঘিরে গজিয়েছে লতা পাতা। আবর্জনা ও দুর্গন্ধে টেকা দায়। সঙ্গে রয়েছে সাপের উপদ্রপ। এই আবাসনে বহুদিন যাবৎ নেই পানীয় জল সহ নিত্য ব্যবহারের জন্যও জল।এখানে বসবাসকারী নার্সিং স্টাফেরা কার্যত চরম অবহেলা ও দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন এই আবাসনে।

অভিযোগ, এই আবাসনে নেই কোনো পানীয় জলের সরবরাহ। অগত্যা হাওড়া পৌর নিগমের পাঠানো জলের গাড়ির উপরেই নির্ভর করে চলতে হচ্ছে তাঁদের। হাসপাতালে ডিউটি সেরে আবাসনে ফিরে জলের গাড়ির অপেক্ষা। যেদিন গাড়ি আসে সেদিন বালতিতে জল ভরে আবাসনে নিজের ফ্ল্যাটে জল নিয়ে যেতে হয় তাঁদের। আর যেদিন জলের গাড়ি আসে না। সেদিন পানীয় জলতো দুরস্ত, বাথরুমের কোমডেও নিত্যকর্ম সারার পরে ফ্লাশ করার জল পর্যন্ত থাকে না। অগত্যা এইভাবে জীবন কাটাচ্ছেন এই আবাসনে বসবাসকারী একাধিক নার্সিং স্টাফ, ফার্মাসিস্ট ও তাঁদের পরিবার। প্রায় ২০ টি পরবারের জীবন বিপর্যস্ত সেখানে।

এই প্রসঙ্গে ওই হাসপাতালে কর্মরতা নার্সিং স্টাফ তনিমা সামন্ত অভিযোগ করেন, এই আবাসনে তাঁরা চরম দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। প্রতিদিন ডিউটিতে যাওয়ার আগে বা ডিউটি থেকে ফেরার পরে বালতি নিয়ে জলের জন্য লাইন দিতে হয়। ঘরে জল না থাকার দরুন নিত্যকর্মের কাজ হাসপাতালেই সারতে হয়। রোজ জলের লাইনে বালতি রেখে যান যদি কেউ সেটা জল ভরে রেখে দেয় তাঁর জন্য। নাহলে বাড়ি ফিরে একফোঁটা জল পাওয়া যায় না।

অপরদিকে এই হাসপাতালের কর্মরত স্টোর কিপার সর্বরী দে অভিযোগ করেন, তাঁদের হাসপাতালকে ইতিমধ্যে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করেছে রাজ্য সরকার। এই অবস্থায় তাঁরা সেখানে ডিউটি সেরে বাড়ি এসে জল পান না। হাসপাতালে কাজ সেরে কেয়ার্টারে ফিরে পোশাক কাচাকাচি করে নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের সংক্রমনের হাত থেকেযে বাঁচাবেন, সেটুকুও তাঁরা পারছেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইতিমধ্যে ওই আবাসনে একটি পরিবার কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। নূন্যতম পানীয় জল ছাড়াও একটি পরিবারে অনেক জলের প্রয়োজন হয়। তিনি জানান হাসপাতালের সুপারকে জানানোর পর একটি মাত্র গাড়ির ব্যবস্থা হয়েছে এই আবাসনে। যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট অপ্রতুল।

তিনি আরও অভিযোগ করেন তিনি নিজে অসুস্থ্য। তাঁকে ডাক্তার ভারী জিনিস তুলতে নিষেধ করেছেন। তবু তাঁকে রোজ বালতিতে জল ভরে সিঁড়ি ভেঙে ঘরে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যেও তাঁদের ডিউটি করতে হচ্ছে। তাঁরা যথেষ্ট আতঙ্কিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

গত ২৫ দিন ধরে এই আবাসনে জল আসছে না। কোয়ার্টারে ট্যাঙ্কে জল উঠছেনা।এভাবেই পড়েআছে দিনেরপর দিন। তাঁরা বিভিন্ন জায়গাতে জানানোর পরেও কোনো সুরাহা হয় নি। ঠিক কবে তাঁদের এই সমস্যার সমাধান হবে তাও তাঁদের অজানা। আজ সকালেও দেখাযায় তাঁরা বালতি লাইন দিয়ে রেখে অপেক্ষা করছেন কখন জলের গাড়ি সেখানে পৌঁছবে। বেলা ১০ পর্যন্ত জলের গাড়ি না পৌঁছানোয় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বাস্থ্য কর্মিরা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা

জল দেওয়ার পর গতকালের একটি গাড়ি সেখানে রাখা ছিল। সেটায় চেস্টা করে ট্যাঙ্কের তলায় পড়ে থাকা কিছুটা জলথেকে হাতে গোনা দু-এক বালতি জল জুটলেও বাকিরা জল না পেয়ে জলের সন্ধানে অন্যত্র চলে যান। কাজে যোগ দানের সময় হয়ে যাওয়ায় কোনো কোনো কর্মী খালি বালতি নিয়েই ঘরে ফিরে যান।

যদিও এই প্রসঙ্গে হাওড়া পৌর নিগমের কমিশনারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা তিনি জানান ওখানে যদি জলের লাইনের সমস্যা থাকে তাহলে পৌর নিগমের পিএইচই বা যারা ওখানে দায়িত্বে আছেন জলের সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সমস্যার সমাধান হবে। যদি জল সরবরাহকারী পাইপ লাইনের সমস্যা হতো এতদিনে তিনি জানতে পারতেন ও জলের সমস্যা সমাধান হয়ে যেত।

গত ২৫ দিন ধরে এই আবাসনে জল আসছে না। তারা বিভিন্ন জায়গাতে জানানোর পরেও কোনো সুরাহা হয় নি। ঠিক কবে তাদের এই সমস্যার সমাধান হবে তাও তাদের অজানা।