কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত/তমাল সাহা

পুজোর আসল সংবাদ

কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত

তমাল সাহা

সংবাদ মূলত কবিতা। মহান জনেরা বলে গিয়েছেন, এ কথা। আমি বলি সংবাদ-ই প্রকৃত জীবন কাব্য।

পুজোর মরশুম। প্রকৃতির অনেক চিত্র আঁকতে পারো তুমি। চণ্ডীপাঠের মন্দ্রস্বর ধ্বনিত করতে পারো কিন্তু রাষ্ট্র বিধ্বস্ত এই জীবন কাহিনী কজন কণ্ঠায়ন করতে পারে,তাছাড়া দায়-ই বা তাদের কিসের!

দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গা মণ্ডপে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত। সব মণ্ডপেই দুর্গা দশাস্ত্র। সবাই জানে দুর্গা শব্দটি এসেছে দুর্গ থেকে। তিনি দুর্গেশনন্দিনী, দুর্গতিনাশিনী, দশপ্রহরণী। তার কোনো হাতেই অন্ন নেই, বস্ত্র নেই ,নেই কোনো নিয়োগ পত্র। অথচ তিনি নাকি সর্বদায়িনী!

ভারতবর্ষের উপকূলে উৎকোচের মুক্ত কারবার। এখানে চাকরিও পণ্য। তার মহান কারবারি রাষ্ট্র।

দু দফায় সাড়ে সাত লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও চাকরি পায়নি আব্দুর রহমান। সে লালগোলায় থাকে। গ্রাম সারপাখিয়া। জেলা মুর্শিদাবাদ। বয়স পঁচিশ।

মঙ্গলবার ২৭ সেপ্টেম্বর,২০২২ সে আত্মঘাতী হয়েছে। ময়না তদন্ত না করেই তার মরদেহ কবর দিয়ে দিয়েছে তার পরিজন।

এই আব্দুর চার পাতার সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছে তার আত্মহত্যার কারণ। আব্দুরের বাবা মফিজুদ্দিন শেখ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। শুক্রবার ৩০ সেপ্টেম্বর কবর থেকে তার দেহ তুলে ময়না তদন্ত করা হয়। বিডিও সুব্রত ঘোষের উপস্থিতিতে গোটা প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে ভিডিওগ্রাফি করে রাখা হয়েছে।

গোরস্থানের বহমান বাতাস বলে,

আব্দুরের সৌভাগ্য তার দেহ কবরস্থ করা হয়েছিল। তাই ইন্তেকাম কালে সে এই ক্ষুদ্র জীবনে দুবার জানাজার সুযোগ পেল। আব্দুরের দেহ যদি শ্মশানের চিতায় জ্বলে উঠতো তবে কিভাবে তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা যেত!

শ্মশান পুরোহিত বলে উঠতো মন্ত্র উচ্চারণ করো, ওঁম স্বাহা! ওঁম স্বাহা! দেহ পুড়ে ছাই হয়ে যায়! আত্মা পঞ্চভুতে বিলীন!

থিমের হুল্লোড়ে দ্রুত ছুটতে থাকে নাগরিক বাতাস‌।

সাদা মেঘ সোনা রোদে পূর্ণ হয়ে গেছে আকাশ।

কত প্রজন্ম এভাবে হারিয়ে যায়, কে রাখে তার তত্ত্বতালাশ?

এই লিখনে কোন বৌদ্ধিক চিন্তনের প্রকাশ নেই, নেই কোনো চিত্রকল্প, উৎপ্রেক্ষা সমাসোক্তি অলঙ্কার, অনুপ্রাস।

এই লিখন চলমান বাতাসের মতো সহজ, নদীর বহমান স্রোতের মতো স্বাভাবিক

এটা কি কোন কবিতা হলো?