অবতক খবর,১৮ জানুয়ারি,নদীয়াঃআজ থেকে ৪৬ বছর আগে ভাগীরথী নদীর তীরে পুজোর সূচনা হয় পৌষকালী মাতার, যা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তর উচ্চতার এই কালী প্রতিমা ৫২ হাত পৌষকালী নামে প্রচলিত। এখনো ভাবতে অবাক লাগলেও এই পৌষ কালী মাতার পুজো হয়ে আসছে শান্তিপুরের নৃসিংহপুর কালনা ঘাটের ঠিক পাশে। জানা যায় আজ থেকে ৪৬ বছর আগে শুরু হয় পূজোর সূচনা, প্রথম থেকেই প্রতিমার উচ্চতা ছিল ৫২ হাত, কিন্তু একটা সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অতিরিক্ত ঝড়ো হাওয়ার দাপটে ভেঙে যায় প্রতিমা, এর পর থেকেই প্রতিমার উচ্চতা একটু কমে আসে। এখন প্রতিমার উচ্চতা ৪২ হাত, অর্থাৎ প্রায় ৬৩ ফুট।

পুজো উদ্যোক্তারা করেছেন মন্দির নির্মাণ, বেশ কয়েক বছর ধরে নবনির্মিত মন্দির এই পূজিত হয়ে আসছে এই ৫২ হাত নামে প্রচারিত পৌষ কালী মাতা। প্রত্যেক বছর পৌষ সংক্রান্তি তিথিতে শুরু হয় দেবীর আরাধনা, চলে প্রায় দশ দিন ধরে। বিভিন্ন পিঠস্থান থেকে সাধু সন্ন্যাসীরা এসে উপস্থিত হয় দেবীর আরাধনার স্থানে। সাধু সন্ন্যাসীদের জন্য বিশেষ শিবিরের আয়োজন করে পূজো উদ্যোক্তারা, এছাড়াও তাদের আহারের ব্যবস্থাও করা হয়। দশ দিন ধরেই মোটা মোটা বেল কাঠ দিয়ে একভাবে হোম যজ্ঞ করতে থাকেন সাধু সন্ন্যাসীরা। তবে প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ কিছু নিয়ম, প্রতিমার উচ্চতা অনেকটাই বেশি থাকার কারণে মন্দিরেই নিরঞ্জন করা হয় প্রতিমাকে। বেশ কয়েকটি স্যালো মেশিন বসিয়ে চলে নিরঞ্জন প্রক্রিয়া। নিরঞ্জন প্রক্রিয়ার পরিকাঠামো ড্রেনের মাধ্যমে পাস করানো হয় ভাগীরথী নদীতে। প্রথম থেকেই একই নিয়ম চলে আসছে বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। প্রত্যেক বছরই এই পুজোকে কেন্দ্র করে বসে বৃহত্তর একটি মেলা, যেখানে অগণিত মেলা দোকানিরা দোকান নিয়ে বসেন। নদীয়া জেলা তো বটেই সারা রাজ্য থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা প্রতিমা দর্শন করতে আসেন প্রতিদিনই। গত দুবছর করোনা আবহাওয়ার কারণে ছিল কিছু বিধিনিষেধ, এবছর আড়ালে করোনার চোখ রাঙানি থাকাতে একটু হলেও বিধি-নিষেধ জারি রেখেছেন পুজো কমিটির সদস্যরা। মাস্ক, স্যানিটাইজার এছাড়াও দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিমা দর্শন করার জন্য দর্শনার্থীদের আবেদন পুজো কমিটির পক্ষ থেকে।

তবে আক্ষেপের সুরে পুজো কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী তো বটেই, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তর উচ্চতার এই কালী প্রতিমা চিরাচরিত নিয়ম মেনে এখনও তারা পুজো করে আসছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিমার মন্দির নির্মাণের জন্য যদি আর্থিক সহায়তা করা হতো তাহলে হয়তো অন্যান্য পীঠস্থান গুলির মতোই শান্তিপুর নৃসিংহপুর কালনাঘাটেও তৈরি হতো এক মহান পিঠস্থান।