এবার ভেঙে পড়ল বিদ্যাসাগরের হাতে গড়া ভগবতী ভবন

অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ

বিদ্যাসাগর নামে একটি লোক ছিল। ‌লোকটির কী কপালই না করে এসেছিল!।জীবনটা শুরুই মারধরের মধ্য দিয়ে। বিধবা বিবাহ প্রচলন করতে গিয়ে কী হ্যাপা! শুধু হ্যাপা? শত্রুতা বেড়ে গেল। তার বিরুদ্ধে খিস্তি খেউড় তো চললই, তির্যক গান লেখা হলো। এখানেই শেষ নয়, ঢিল পর্যন্ত খেতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নিজেই লিখলেন ক্ষোভে নারীদের প্রতি অনুরাগে, আমাকে অনেকে নারী জাতির পক্ষপাতী বলিয়া মনে করেন…

আর বিদ্যাসাগরের মূর্তি! ৭০ দশক তো বিদ্যাসাগরকে নিয়ে তোলপাড়। সেই দশকে তাঁর পরিচিতি বেড়ে গেল আরো দ্রুত। সে যে কতবার ভাঙা হলো তাঁর মূর্তি! এই একুশ শতকেও এই সেদিন তার মূর্তি বিদ্যাসাগর কলেজে বুকে ভাঙা হলো প্রকাশ্যে। আর তা নিয়ে রাজনৈতিক ফয়দা লোটার কী সচেষ্ট প্রচেষ্টা!কেন যে আমাদের এত আক্রোশ ছিল তাঁর প্রতি, কে জানে!

বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা হলো গতকাল ছয় জুলাই রাত বারোটার পরে। বললেন, মরে গিয়ে বেঁচে গেছি রে!ভাগ্যিস এখন ওই পাথরের মূর্তির উপর দিয়ে যাচ্ছে। নাহলে এখন বুড়ো বয়সে কত আঘাতই না সইতে হতো আমাকে!এমনিতে তো গায়ে কোন শক্তপোক্ত পোশাক নেই, চাদরই সম্বল।আর শোন, আমার ওই হাতে গড়া স্কুলটা যেটা ঘাটালের বীরসিংহ গ্রামে বানিয়েছিলুম, মায়ের নামে উৎসর্গ করেছিলুম,ওটা হেরিটেজ কমপ্লেক্স বানাতে গিয়ে নাকি ভেঙে ফেলেছে। নামজাদা বড় বড় কারিগরেরা, সরকার নাকি দেখভাল করছিল! দুটো গেট আর একটা কমিউনিটি হলের জন্য ঠিকেদার নাকি চেয়েছিল ৩২ কোটি টাকা! বর্ণপরিচয় গেট, বীরসিংহ গেট আর কমিউনিটি হল হবে। শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে শুনলাম ৬ কোটি টাকা।

মনে পড়ছে তুমি বর্ণপরিচয় লিখেছিলে। বর্ণ-অক্ষর শিখিয়েছিলে,শতকিয়া শেখাওনি। তাই আমরা ৩২ কোটি টাকা কি করে এত নিচে ৬ কোটি টাকায় নেমে যায় তার হিসেব মেলাতে পারিনি।

তবে বাতাস বলছে, মাঝখানে নাকি কাট মানি ধরতে ভুলে গেছি সেটা ধরলেই হিসেব মিলে যাবে।

যাই হোক, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়েছিল, এবার তার হাতে গড়া ভগবতী বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যপূর্ণ ভবনটি ভেঙে পড়ল। সরকারের নজরদারি পূর্ত বিভাগের অফিসাররা ভাঙনস্থল নজরদারি করে গিয়েছেন।

তারপর? তারপর আবার কি? হাতে রইল পেন্সিল, মানে তদন্ত। আর তদন্ত মানে, যার নেই অন্ত!