অবতক খবর,২ নভেম্বর,নদীয়াঃ দুর্গাপুজো,লক্ষ্মী পুজো এবং কালীপুজোর মতো বিভিন্ন পুজোর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলেও পাওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় পুরোহিত। লক্ষ্মীপূজো, সরস্বতী পুজো,কালীপুজোর মত যেসব পুজোগুলো বাঙালির বিভিন্ন ঘরে ঘরে হয়ে থাকে, সেই সব পুজোর জন্য পুরোহিতের সংখ্যা ক্রমশ কমে গিয়েছে।অথচ বেড়েছে পুজোর সংখ্যা।সেই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে নদিয়ার হাঁসখালি ব্লকের বগুলায় নতুন পুরোহিতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করার জন্য বেশ কিছুদিন আগেই চালু করা হয়েছে ‘ গৌর হরি মডার্ন টোল’ নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পৌরহিত্য করার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন মহিলারাও।

ইতিমধ্যেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ওই টোলে যোগ দিয়েছেন একাধিক মহিলা।তারা সকলেই পৌরহিত্যের প্রশিক্ষণ নিয়ে পুজো করার ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী।ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অভিরাম বিশ্বাস জানিয়েছেন,’ বাঙালি এখন অনেকটাই ধর্মপরায়ন।তাই বাঙালির ঘরে ঘরে গণেশ পুজো,লক্ষ্মীপূজো, সরস্বতী পুজো, কালীপুজোর মত একাধিক পুজো সারা বছর ধরে হয়ে থাকে।বাড়ির মহিলারা সকাল থেকে উপোস থেকে পুজো সম্পন্ন করতে চান।কিন্তু ইদানিং পুজো করার জন্য পুরোহিতের ভীষণ অভাব।ফলে পুজোর জোগাড় করার পরেও দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেও সঠিক সময়ে পুরোহিতের দেখা মেলে না।এ এক ধরনের বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে।এই অবস্থা আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে দেখে আসছি।তাই পুরোহিতের সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য নিয়ে গৌরহরি মডার্ন টোল নামে পৌরহিত্যেরদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে বগুলায়।সেখানে নতুন প্রজন্মের অনেকেই পুরোহিত হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।লক্ষণীয় বিষয় হল,মহিলারাও অনেকেই পৌরহিত্য করার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন।কারণ, শাস্ত্রে মহিলাদের পূজো করার ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ নেই।তাই পুরোহিতের অভাব মেটাতে আমরা পুরুষ,মহিলা উভয়কেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে তারা ভালোভাবে পুজো শিখে বিভিন্ন পুজো সম্পন্ন করতে পারেন।

আমার স্থির বিশ্বাস,যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবেই সফল হবে এবং সেটা এরাজ্য তো বটেই, বিভিন্ন রাজ্যে,এমনকি গোটা ভারতবর্ষে এই পদ্ধতির মাধ্যমে পুরোহিতের অভাব মেটাতে অনেকেই উদ্যোগী হবেন।’ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে ইতিমধ্যেই দুর্গাপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, মনসা পূজোর মত বিভিন্ন ধরনের পুজো নিজেই করছেন মহিলা পুরোহিত কানন বালা দেবী।শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ধরনের পুজো করা শিখে তিনি এখন ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অন্য মহিলাদের পৌরহিত্যেরদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।তিনি জানিয়েছেন,’আমি যখন এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলাম, তখন মহিলাদের সংখ্যা ছিল নিতান্তই কম।এরপর আমি বিভিন্ন ধরনের পুজো শিখে পুজো করা শুরু করি এবং আমার পরিচিত বিভিন্ন মহিলাদের এই কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য নিয়ে আসি।এখন একাধিক মহিলা এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পুরোহিত হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।আমি মনে করি, দেবতাকে পূজো দেওয়ার অধিকার যেমন পুরুষদের রয়েছে, তেমন মহিলাদেরও রয়েছে। এছাড়া যখনই কারোর পুজো করানোর ইচ্ছা তৈরি হয়, তখন তারা এখানে ফোন করে মহিলা পুরোহিতকে পাঠিয়ে দিতে বলেন।’ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই গত চার বছর ধরে দুর্গাপূজো, কালীপুজো,সরস্বতী,লক্ষ্মী, বিশ্বকর্মা,জগদ্ধাত্রী পূজো পর্যন্ত করে ফেলেছেন রমেশ বিশ্বাস।তিনি জানিয়েছেন,’বিভিন্ন পূজোর নিয়ম কানুন শিখে আমি ইতিমধ্যেই গত চার বছর ধরে বিভিন্ন পুজো করে আসছি।গরিব মানুষ যারা পূজো করতে চান অথচ তাদের সামর্থ্য কম, তাদের কাছ থেকে আমরা পুজো করে পারিশ্রমিক নেইনা।এখানে বর্তমানে অনেকেই পুজো করার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।’নদীয়ার হাঁসখালির গৌরনগর কুমার সংঘের জগধাত্রী পুজো ২৫ বছরে পড়ল । প্রতিবছর এরা ব্রাহ্মণ পুরোহিত দ্বারা পূজো করলেও এ বছর মহিলা পুরোহিত কে দিয়ে পূজা করালেন । ক্লাবের পাশাপাশি গ্রামের মহিলারা সন্তুষ্ট এই পুজোতে । পুরোহিত কানন বালা দেবী দেশ সুনামের সাথেই পুজো করলেন গ্রামে ।