অবতক খবর, ১২ জানুয়ারিঃ কাঁচরাপাড়া! কত তার বদনাম। সেই কাঁচরাপাড়ার মাটি খুঁড়ে যেন বেরিয়ে আসে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। নরেনও এসেছিল এইখানে। বিবেকানন্দ হয়ে বিশ্বজয় করে।

সেটা মে মাস ১৯০২ সাল।তবে ‘ স্মৃতির আলোয় স্বামীজি’ গ্রন্থের লেখক নরেশ চন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন ৬ জুন তিনি এখানে এসে ১২ জুন মঠে ফিরে আসেন।
কাঁচরাপাড়া ইস্টিশনে এসে থামলো সেই স্টীম ইঞ্জিনে টানা ট্রেন। আর সেও নামলো কাঁচরাপাড়া প্লাটফর্মে।

সেই দিব্যকান্তি গৈরিক পুরুষ। গরুর গাড়ি তার জন্য রেডি ছিল লাইনের ওপারে। যেদিকে এখন ত্রিকোণ পার্ক।
সে বেশ আয়েস করে বসলো। সে চলল কার বাড়ি? সর্বেশ্বর সিংহের বাড়ি। বড় জাগুলিয়া। গ্রাম দিঘা। বিবেকানন্দের দূর সম্পর্কের বোন থাকতো সেখানে।শুধু কি বোন? আবার মন্ত্রশিষ্যা। নাম তার মৃণালিনী বসু। সর্বেশ্বর সিংহ হলেন মৃণালিনী দেবীর বাবা। তার স্বামী বেণীমাধব বসু। বেণীমাধব সন্ন্যাসী হলেন। মৃণালিনী দেবী চলে এলেন বাপের বাড়ি। তাকে দেখতে এলো বিবেকানন্দ। বনগাঁ রোড ধরে গরুর গাড়ির চাকা চলতে লাগলো। এসে পৌঁছাল জাগুলিয়াতে। তার সঙ্গে কানাই মহারাজ। (স্বামী নির্ভয়ানন্দ)। আর নাদু মহারাজ– স্বামীজির ভাগ্নে।

সে এখানে কতদিন ছিল? সাতদিন। সে এখানে এসে শিশুদের সঙ্গে মিশেছিল। সর্বেশ্বর সিংহের বাড়িতে বড় জলাশয় ছিল। এখনও আছে। সেবার শিশুদের সাঁতার প্রতিযোগিতা হয়েছিল। বিবেকানন্দই তার উদ্যোগ নিয়েছিল।

মৃণালিনী দেবীকে সে একটা তার নিজের ছবিও উপহার দিয়েছিল। সেই ছবি এখনও সেই বাড়িতে আছে। আর দু দুবার চিঠি লিখেছিল দেওঘর থেকে। একবার ১৮৯৭-এর ৩ জানুয়ারি। আর একবার ৩ ডিসেম্বর ১৯০০তে।

এখন সে বাড়ির নাম “স্বামীজির পদচিহ্ন”। সেখানে লেখা আছে– প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মুগ্ধকারী ও অভীঃ মন্ত্র দীক্ষাদাতা ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর সন্ন্যাসী এই গৃহে কয়েকদিন বাস করিয়াছিলেন ১৯০২, মে।

আর কি কিছু কথা আছে? স্বামীজি এখান থেকে ফিরে যাবার পরই ৪ জুলাই আমাদের ছেড়ে চলে যান। আর? আর এই মৃণালিনী বসুর একমাত্র পুত্র ছিলেন বিষাদ বসু। আর এই বিষাদ বসুর পুত্রই অশোক বসু ওরফে প্রকাশ রায়। এই ছদ্মনামেই তিনি পলাতক ছিলেন,যাকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছিল। তিনি ছিলেন একজন কমিউনিস্ট কর্মী। তেভাগা আন্দোলনের জঙ্গি জওয়ান। তার মাথার দামও ঘোষিত হয়েছিল। এই অশোক বসুর সঙ্গে এই অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত সুপরিচিত কমিউনিস্ট নেতা অমূল্য উকিলের সখ্য ছিল। অমূল্য উকিলও একদা জাগুলিয়া সংলগ্ন খুর্দ মনপুরে ( মোহনপুর) থাকতেন।

আর কাঁচরাপাড়ায় বিবেকানন্দ শতবর্ষের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কাঁচরাপাড়া নাগরিক সমিতি, ১২ জুলাই ১৯৬৪। তা অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাঁচরাপাড়া পৌরসভা ভবনে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিধায়ক কৃষ্ণকুমার শুক্লা। বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রীমতী অনিমা রায়চৌধুরী। সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন রাসবিহারী শাস্ত্রী। অনুষ্ঠানে চরিত্র গঠনে বিবেকানন্দের ভূমিকা এবং কর্মময় জীবন সম্পর্কে বিশেষ বক্তব্য রেখেছিলেন সমাজতন্ত্রী ব্যোমকেশ ব্যানার্জী।

এসব স্মৃতিভরা ঘটনা হেমন্তের পাতার মতো অবিকল ঝরে পড়ে তোমার বুকের ওপর কাঁচরাপাড়া!

কৃতজ্ঞতাঃ স্মৃতির আলোয় স্বামীজী, নরেশচন্দ্র ঘোষ।