অবতক খবর,১৭মেঃ এগরায় অবৈধ বাজিকারখানার বিস্ফোরণ কান্ডে

রাত নয়টা নাগাদ কলকাতা থেকে Bomb squad ও CID team এসে পৌঁছায়। তাঁরা ঘটনাস্থলে নমুনা সংগ্রহ করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার অমরনাথকে।

মৃত ও আহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের পরিবার পিছু আড়াই লক্ষ টাকা সেইসঙ্গে আহতদের চিকিৎসার জন্য পরিবার পিছু এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। জেলা পুলিশ সুপার অবর্ণাবকে বিকেলেই সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন এগ্রাই বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্তভার নিচ্ছে সিআইডি, তৎসহ ফরেন সিক্স সাইন্স ডিপার্টমেন্ট এবং বোম ডিসপোজাল ফোর্সকে জেলা পুলিশ এই ঘটনার সাহায্যের জন্য ডেকেছে।

এগরায় খাদিকুল গ্রামে অবৈধ বাজি কারখানায় ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ জন। এদের মধ্যে বেশীরভাগ হতভাগ্যই মহিলা বলে জানা গেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অমরনাথ কে. ঘটনাস্থলে গিয়ে জানান, “এখন পর্যন্ত পুলিশ ৯টি মৃতদেহ উদ্ধা করেছে। সেই সঙ্গে আর কোনও মৃতদেহ আশেপাশে রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে”। এরই পাশাপাশি পুলিশ সুপার জানান, “এই ঘটনায় গুরুতর জখম ২ জনকে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম-এ উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে”।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিনের বাজি কারখানায় মৃতেরা হলেন অম্বিকা মাইতি (স্বামী-সুরেশ), মাধবী বাগ (স্বামী-সঞ্জিৎ), শ্যামাশ্রী মাইতি (স্বামী-রবীন্দ্র), কবিতা বাগ (স্বামী-উমাপদ), মিনতি মাইতি (পিতা- শীতল), শক্তিপদ বাগ (পিতা- স্বর্গীয় অনন্ত), জয়ন্ত জানা (পিতা- স্বর্গীয় ভৈরব), বাপন মাইতি (পিতা-গৌরাঙ্গ)। তবে একজনের নাম এখনও জানা যায়নি।

এদিন ঘটনার প্রতিবাদে গোটা এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দুপুর থেকেই দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে রয়েছেন। মাঝে মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন উত্তেজিত গ্রামবাসীরা। প্রায় বছর ৩০ ধরে এলাকায় দাপটের সঙ্গে বাজি কারখানা চালাচ্ছিল বছর পঞ্চাশের কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু। বিভিন্ন জায়গায় বাজি প্রতিযোগিতায় সেরার তালিকায় ভানু বিচরণ করত। গোটা বছর এলাকার সব থেকে জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলিতে বাজি প্রদর্শনী ছিল ভানুর নেশা।

তবে এভাবে অবৈধ বাজি কারখানা চালাতে গিয়ে আগেও দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ভানু। আজও অল্পের জন্য ভানু বেঁচে গিয়েছে বলেই প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী। এদিন কারখানার পাশের রান্নাঘরে ভানু ছিল। বাজি বিস্ফোরণে তাঁর হাত ঝলসে গিয়েছে বলে খবর। তবে দুর্ঘটনার পরেই জমি টপকে স্বপরিবারে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার এদিন জানান, ““এটি একটি অবৈধ বাজী কারখানা। আগেও ৩ থেকে ৪টি কেস হয়েছে এই কারখানার বিরুদ্ধে। একাধিকবার রেড করা হয়েছিল এখানে। তবে তারপরেও অভিযুক্ত ব্যক্তি নতুন করে কারখানা তৈরি করেছে”।

পুলিশ সুপার আরও জানান, “অভিযুক্ত কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু বাগ কে গ্রেফতার করার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া চলছে। এরপর তদন্ত যত এগোবে সেই অনুযায়ী আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব”। এরই পাশাপাশি তিনি জানান, “ইতিমধ্যে ফরেনসিক টিম বেরিয়ে এসেছে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে। তাঁরা আজই ঘটনাস্থলে পৌঁছে তথ্য সংগ্রহ করবে। বাকী তদন্তপ্রক্রিয়া যা করা যায় আমরা করছি। আর কোনও দেহ রয়েছে কিনা আমরা সার্চিং করছি। আমরা উদ্ধার হওয়া দেহগুলোকে ময়না তদন্তের জন্য পাঠাচ্ছি। সেই সঙ্গে বাকী ডিটেলসগুলোও সংগ্রহ করা হচ্ছে”।