এখন তোমাকে নিয়ে খুব হৈচৈ।প্রথম ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানীর নিজ হাতে তৈরি মানব কল্যাণে নিয়োজিত রাসায়নিক কারখানা বেঙ্গল কেমিক্যাল-এর কারিগর তুমি। উল্লেখযোগ্য ওষুধ ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনিন তৈরি হয় এখানে। করোনা ভাইরাস মারণযজ্ঞে তার ভূমিকা এই দুঃসময়ে প্রমাণিত।

একটা এলেবেলে মানুষ
তমাল সাহা

ওই এলেবেলে মার্কা চেহারা দেখেই বোঝা যায়, তুমি বস্তুটিকে সাদামাটা দেখালেও খুব সুবিধের ছিলে না।

ইংরেজরা মনে মনে বলেছিল, মালটির রসায়নই আলাদা। কেউ পারলোনা? মার্কারির সঙ্গে নাইট্রিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় দেখিয়ে দিলো খেল! বাই জোভ!

বিজ্ঞানী তো বয়েই গেছে।
কেন? ব-এ বিজ্ঞানী ছাড়া
ব- এ বাঙালি,ব-এ বাণিজ্য,ব-এ বিপ্লবী হওয়া যায় না?

ইংরেজি প্রেমিকরা শুনে রাখুন,
এই রাসায়নিক প্রাণময় পদার্থটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোপুরি বাংলায় ক্লাস নিতেন।
বাঘা বাঘা ছাত্র ছিল তাঁর।
সত্যেন্দ্রনাথ বোস, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখার্জি, জ্ঞানেন্দ্রচন্দ্র ঘোষ আরো কতো…

এক কান্ড বাঁধালো সে।
মুসলিম ছাত্র কুদরত-ই-খুদাকে এম এস সি-তে প্রথম শ্রেণী দিয়েদিলে!
আড়চোখে তাকিয়ে ছিল হিন্দু অধ্যাপকেরা।
তাদের সোজাসুজি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, মানীকে তো মান দিতেই হবে।
সেখানে হিন্দু-মুসলিম করলে হবে?

কি এমন বিজ্ঞানী তুমি?
কি লিখলে, না ‘বাঙালির মস্তিষ্ক ও তার অপব্যবহার’। ‌ লিখলে ‘অন্নসমস্যায় বাঙালির পরাজয় ও তাহার প্রতিকার’,’ব্যবসায়ে বাঙালি’।আর লেখার কোন বিষয় পেলে না তুমি।

এ কেমন বিজ্ঞানী?
টেস্ট টিউব ছেড়ে জাতিভেদ,বাল্যবিবাহ,
পণপ্রথার বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলো।
বিপ্লবীদের অস্ত্র কেনার টাকা দাও।
কেমিক্যাল কারখানা গড়ে তুলতে নিঃশর্তে তুলে দাও অর্থ। ‌
রাওলাট বিলের বিরোধিতা করে আবার দাও ভাষণ?

বিজ্ঞানী তো ছিলেই, লেখক তো ছিলেই,
আবার কবি হতে গেলে কেন?
‘রবিপ্রয়াণ’ কবিতা লিখে ফেলে দিলে আলোড়ন।

অপূর্ব অদ্ভুত আশ্চর্য এই বাঙালি!
সাইমন কমিশনের সদস্যরা দেখতে এলো তোমায়।
শুকনো কাঠের মতো তোমার চেহারি—
মানুষটি তখন গামছা পরে বসে আছে চেয়ারে।
অদ্ভুত মানুষ তুমি!
তখন সবে নিজের হাতে ধুতি কেচে রোদে শুকোতে দিয়েছো তুমি।‌

এই তোমাকে নিয়েই এখন হইচই,
বাঙালিদের বড়াই। সে কী উল্লাস!
বেঙ্গল কেমিক্যাল! বেঙ্গল কেমিক্যাল!
এখন যেন হয়ে উঠল স্লোগান।
১৯০১ সালে হাতে ধরে তুমি গড়েছিলে,
এখন তা জেগে উঠল ২০২০-তে।

তামাম দুনিয়া কাঁপিয়ে জেগে উঠল রাষ্ট্রনেতারা।
বাতাস কাঁপিয়ে সে কী আওয়াজ—
কলকাতা! কলকাতা! হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনিন!
দুনিয়ার মানুষের ফিরছে বুঝি সুদিন।