আদিবাসী চার মেয়ের গল্প। এরা সদ্য মাধ্যমিক পাশ করেছে

ই তো সুখবর ব্যুটে
তমাল সাহা

মুদের গল্প ধান মাইপব্যার কুনকে দিয়ে মাপ কইরবার যাইবে নারে বাবু!
মোদের গল্প তাল গাছের চাইতে লম্বা ব্যুটে,পলাশ গাছের মতো ঝাপড়া ব্যুটে!

মুরা ধান রুইতে জানি, ধান কাইটতে জানি সেই ছোট্ট টুকুন বেলা থ্যিকে। মুদের মা ছাড়া কিছুই লাই। বাপ তো কবেই মইরে গ্যাছে! মুরা মায়ের সঙ্গে মাঠে যাই খেতে কাম করি। মুরা দিনমজুর ব্যুটে।

মুদের বড় গব্ব মুরা রবি ঠাকুরের দ্যাশের লোক। মুদের গাঁয়ের নামটি বড় ভালো! সাহেবডাঙ্গা, বীরভূম জিলা। অবশ্যই শান্তিনিকেতন থিক্যে অনেক দূরে। উ যে কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত নামটো শুনিস লাই! তিনটো মাঠ পেইরে ইস্কুল যাইতে হয়। মুদের পায়ে খুব জোর বুট্যে গো! চাইর কিলোমিটার হাঁইটতে হাঁইটতে ইস্কুলে চইলে যাই। ধুত্তোর, জল বৃষ্টি মাথার উপর আগুনের চুলা! ই টুকুন হাইট্টে চলা তো মুদের কাছে জলভাত!

উ যে বোলপুর পারুলডাঙা আশ্রম বালিকা বিদ্যাপীঠ আছে না উখানে মু বাসন্তী টুডু আর সুমিত্রা টুডু লতিকা মূর্মু মিরু হাঁসদা এক সঙ্গে পড়াশুনা কইরেছি। ইবার একসঙ্গে মাধ্যমিক পাশ কইরেছি ব্যুটে!

শোন! ই গ্রামে মুরা মেইয়েরা চার বহিন প্রথম মাইধ্যমিক পাশ কইরলুম। লিখাপড়ার সার্টিফিকেট পাইলুম।
মুদের বুকটো অহংকারে ভইরে যাচ্ছে। কিনো বুল তো? এখন মুরা বুইলতে পারব– মুরা ধান রুইতে জানি, মুরা ধান কাইটতে জানি আর মুরা ইখন শিক্ষিত, পড়াশুনো জানি ব্যুটে!

মুরা আদিবাসী হুলে কি হবে? মুরা এই গানটো জানি— মানবজমিন রইলো পতিত আবাইদ কইরলে ফলতো সোনা!