আজ সকালের সংবাদ-কাব্য!

ইরানী ফুটবলাররা বিশ্বকাপের মাঠে গাইলো না জাতীয় সংগীত

ইরান কথা বলছেঃ দেখো শেখো 

তমাল সাহা

আলোর উদ্ভাস আছে বলেই তো অন্ধকারের কথা এত ঘন ঘন ওঠে।মানুষই তো মানুষকে শেখায় জাগায়। প্রতিবাদ শেখো পারস্য উপসাগরের জলবায়ুর কাছে। নীরব প্রতিবাদ কত জোরালো হতে পারে!নীরবতারও সাহস থাকে। স্তব্ধ নীরবতায় কেঁপে ওঠে বিশ্বকাপের খলিফা স্টেডিয়াম।

কুর্দ তরুণীটি, মাশা আমিনী। কতই বা বয়স, বাইশ!হা! হা!পোশাক বিধি! হিজাব আলগা কেন মাথায়? কুন্তলরাশি কেন দেখা যায়? পুলিশি হেফাজতে মারা গেল মাশা। ঘটনা ঘটেছিল ১৬ সেপ্টেম্বর ২২।

হাজার হাজার নারী কেটে ফেললো সুবিন্যস্ত কেশদাম। কেশদামের পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে আকাশে।বিশ্বের ইতিহাসে নয়া ঐতিহাসিক প্রতীকী প্রতিবাদ।হিজাব দাহপর্ব চলেছে অলিতে গলিতে পাড়ায় পাড়ায় রাজপথে।

ইতিমধ্যে ১৫ হাজার প্রতিবাদী গ্রেপ্তার এবং আশ্চর্য আধুনিক সভ্য এই দুনিয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হয়ে গেছে। আরো আশ্চর্য এই গ্রেপ্তারের খাতায় টিন এজার অর্থাৎ ঋতুমতী কিশোরীদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে এই কিশোরীদের ধর্ষণের পর রাষ্ট্রীয় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। প্রতিবাদী ও পুলিশের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ৩৪২ছাড়িয়ে গিয়েছে।

গণতন্ত্র মানবাধিকার বিপন্ন– এই যন্ত্রণাকে করে তুলতে হবে আন্তর্জাতিক। বিশ্বকাপ! মানুষের বিপন্নতা বিশ্বকে কাঁপাক। প্রীতি ম্যাচে সেনেগালের বিরুদ্ধে ইরানের ফুটবলাররা খেলেছেন কালো জ্যাকেট গায়ে। টিম স্পিরিটের প্রতিবাদ।

প্রতিবাদ কিভাবে কতদূর যায়! রাষ্ট্রে কি স্তব্ধ করে দিতে পারে সোচ্চার গণকন্ঠ?

কাতারে বিশ্বকাপ, পায়ে পায়ে ফুটবল। বিপন্ন ইরান, চোখে তার নীরবতার জল!

২১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলায় দুই দলের জাতীয় সংগীত গীত হলো। জাতীয় সংগীতে গলা মেলালেন না ইরানের ফুটবলাররা। রুদ্ধ কন্ঠে নির্নিমেষ চোখে মানুষের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন স্তব্ধতায়। মানুষই যখন বিপন্ন জাতীয় সংগীত কতদূর যেতে পারে?

এভাবে ইরানের হাহাকার আর্তনাদ পৌঁছে গেল আন্তর্জাতিক বাতাসে। খলিফা স্টেডিয়াম কেঁপে উঠলো ভাবাবেগে। ইরানের গ্যালারিতে দেখা গেল ব্যানার— নারী জীবন স্বাধীনতা। এই দেশ আমার।

দুনিয়ার সব রাষ্ট্রেরই একই বয়ান। দেশদ্রোহী! ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে গিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক জাফর পানাহি, আরো অনেক পরিচালক ও বুধজন। গ্রেপ্তার হয়েছেন দুই প্রখ্যাত অভিনেত্রী হেনগামেহ গাজিয়ানি এবং কাতাইয়ুন রিহায়ি। অপরাধ হিজাব খুলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তারা এবং ৫০ জন শিশু হত্যার অভিযোগ এনেছেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।

জাগো! জাগতে রহো, ইরানকে দেখো, শেখো।