ভারতবর্ষে আমরা আছি। সত্যিই কি ভালো আছি? এখন এই রাজত্ব কালে আমরা কেমন আছি।
,কে এর সদুত্তর দিতে পারবেন?

আমার ভারতবর্ষ
তমাল সাহা

আমি ভালো নেই। সত্যিই আমি ভালো নেই। আমি অসুস্থ। আমার অসুখ হয়েছে। আমি ভালো নেই। আমার বন্ধুরা এখন আকাশের নীচে মাটির কাছাকাছি নয়। আমি এখন তাদের কাউকেই খুঁজে পাচ্ছিনা। যাদের কথা ছিল আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে বা আমি তাদের বন্ধু হবো, আমি তাদের সান্নিধ্য পাইনি। আমিও তাদের সাহায্য, সাহচর্য কতখানি দিয়েছি সে বিষয়ে আমার এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এই মাটিতে কি আমার কোনো আশ্রয় নেই? শুধু আমার কেন? আমার প্রতিবেশী, যারা আমার কাছের মানুষ বলে মনে করেছিলাম এতদিন তাদেরও আশ্রয় নেই!

আমি এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি নক্ষত্র গুনি। সপ্তর্ষিমণ্ডলের নক্ষত্রগুলোকে চেনার চেষ্টা করি। বৃশ্চিক রাশিকে দেখি। তারা আমাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে। তুমি মাটির সঙ্গে থাকো, মাটির কাছাকাছি থাকো। উত্তর গুলো আমাদের পাঠিয়ে দাও ঊর্দ্ধাকাশের দিকে।
আমি নীরব। আমি চুপ করে থাকি। আমি কথা বলতে পারিনা।

আমি এই উপমহাদেশের, এই অববাহিকায় দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে ঘিরে ফেলেছে চতুর্দিকে আগুন। আমি মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি।

রাষ্ট্র! রাষ্ট্র! রাষ্ট্র! রাষ্ট্র আমাকে নিরাপত্তা দেয় না। কখন কে কী কথা বলে আমি আর বুঝতে পারি না। আমার কলমও আর এগোয় না। তখন আমায় সব ছেড়ে মুখে কথা বলতে হয়। আমি কোথায় এলাম? সূর্যের উল্কাপিণ্ড কী এই কারণেই পৃথিবী সৃষ্টি করেছিল? মানুষকে প্রতিমুহূর্তে প্রতারিত হতে হবে? প্রতিমুহূর্তে অপমানিত হতে হবে?

এই মানুষ! মানুষ! আর মানুষ! চতুর্দিকে কতরকম মানুষ আমি দেখি। তিনি জোড়াসাঁকোয় জন্মেছিলেন। তিনি সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। তিনি প্রতিনিয়ত মানুষের জন্য,নারীদের জন্য লড়েছিলেন। দুশো বছর আড়াইশ বছর পেরিয়ে যায় কিন্তু কত বর্ণ পরিচয় হলো আমাদের। কিন্তু কিছুই কি শেখা হল?

মানুষই মানুষকে পৃথিবী থেকে তাড়ানোর ফন্দি আঁটে।

কিন্তু মানুষ পৃথিবী ছেড়ে যাবে কোথায়?
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে– আমরা ভেবেছিলাম এই পৃথিবী সমস্ত মানুষের আশ্রয়। কেউ কোথাও তাকে আশ্রয় না দিলেও ভারতে সে পাবে মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু আমরা কি পেরেছি বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য আনতে?

ভিন্সেন্ট স্মিথ যার জন্য গর্ব করেছিলেন তাকে কি আমরা অপমান করিনি? অপমান করছি না? আমরা যাবো কোথায়? মানুষ যাবে কোথায়? ভারতই যদি সমগ্র পৃথিবীর মানবিক সত্তাকে আশ্রয় না দিতে পারে পৃথিবীর আর কে দিতে পারে? কোন দেশে এমন সব মনীষার স্ফুরণ ঘটেছে যারা প্রতিনিয়ত লড়াই করে গেছে মানুষের জন্যে?

কেউ না পারুক ভারত তো পারবে। ভারত কি সমগ্র মানবজাতির সত্তাকে আশ্রয় দিতে পারে না?
এত আগুন! এত বারুদ! এত বিস্ফোরণ! এতো খুন রক্তপাত কে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে?

রাষ্ট্র! রাষ্ট্র! বলো। রাষ্ট্র তার ক্ষমতায়নের জন্য কত কায়দা কৌশল করে।
কোথায় আমার বুদ্ধিজীবী? কোথায় আমার বিদ্বজ্জন? কোথায় আমার বিদগ্ধ মানুষ? তারা নীরব কেন? এই নির্যাতিত মানবাত্মা! এই অপমানিত মানবাত্মা!! তার পাশে দাঁড়াবে না?

সেই কন্ঠস্বর আমি আজও খুঁজে বেড়াই। রাত্রির এই ঘনায়মান অন্ধকারের নীচে আমি এই উন্মুক্ত আকাশতলে দাঁড়িয়ে বলিঃ এত অপমান! এত লাঞ্ছনা কি ভারতবর্ষে হতে পারে!

ভারতবর্ষ! সে মহাদেশ না হলেও একটা উপমহাদেশ। তাকে আশ্রয় করে মানুষ বেঁচেছে। যুগে যুগে পরিব্রাজকেরা পায়ে হেঁটে এই দেশ ভ্রমণ করে গিয়েছে। হিউ এন সাঙ, ফা হিয়েন, মেগাস্থেনিস, স্যার টমাস তো তাদের কত গর্বিত
উচ্চারণ আমি শুনেছি। সব কি ব্যর্থ হয়ে যায়!

এই কোন তিমিররাত্রি তুমি ডেকে আনলে এই ভারতবর্ষে! আমরা যাবো কোথায়? আমরা যাবো কোথায়? কুয়োভ্যাদিস! তুমি কোথায় চলেছ? ভারতবর্ষকে নিয়ে যাবে কোথায়?