আমাদের মৃত্যু নেই / তমাল সাহা

আমাদের মৃত্যু নেই। কোনো কারণে আমরা কয়েকজন শুধু চলে যাই। পৃথিবী কোনোদিন মানুষ ছাড়া চলে? উর্দ্ধে আকাশ, মহাশূন্যে বাতাস নিজদের সাথে নীরবে কথা বলে।

আমাদের মৃত্যু নেই
তমাল সাহা

আমাদের মৃত্যু নেই
সেসব কথা হাওয়ারা জানে
বৃক্ষেরা এসব কথা মর্মরে বলে।
প্রত্নতাত্ত্বিক কাল থেকে মাটির গভীর থেকে গভীরে মিলেছে
স্খলিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমাদের শব।
আমরা ছিলাম,আমরা আছি, আমরা থাকিব।
নক্ষত্রের গা ছুঁয়ে চন্দ্রের জ্যোৎস্নার ভিতর
শোনা যায় জীবনের রব।

আমাদের ধ্বংসাবশেষ
পাওয়া গিয়েছিল মাটির ভিতরে,
কোথায় লেখা নেই আমাদের কথা!
নগরে বন্দরে কন্দরে শিলালিপিতে
মিশরে মেসোপটেমিয়ায় ভারত চিনে।
ফা হিয়েন, হিউয়েন সাঙ,ইবন বতুতা
এই প্রান্তরে ঘুরে যায়
বীজগণিত, পাটিগণিত, গুহাচিত্র
কতসব মানবিক কথা!
বোধিসত্ত্ব বুদ্ধদেব হয়ে পরিপূর্ণতা পায়
গার্গী মৈত্রেয়ী এইসব নারীদের
বৈদগ্ধ্যের গাথা।
ঋষিদের ঋদ্ধ কথার সাথে প্রেম ও যৌনতা
সবই তো জীবনের সত্য মিথ্যা উঠে আসে।
সংকীর্ণতার বলয় পরিহার করে
আমরা চেয়ে থাকি
নক্ষত্র পূর্ণ বিশাল আকাশে।

আমরা আধুনিক হয়ে উঠি,
পথে পথে বেশ্যা মাতাল রাজনীতির মিথ্যাচার সবই খুঁজে পাই।

আসলে সকলেই ভিক্ষা পাত্র নিয়ে
যে যার মতো ঘোরে।
বস্তিতে আগুন জ্বলে
দাঙ্গা রক্তপাত খুন ধর্ষণ ধর্ম–
সব একাকার
রাতে শীতল জ্বর নেমে আসে এই শহরে।

পৃথিবীর তিনভাগ নিয়ে গেছে জল
আমাদের তরে রাখা আছে শুধু
একভাগ স্থল।
সামান্য এই ভূমে মানুষের খন্ড খন্ড জীবনযাপন—
মারী মন্বন্তর সবই আসিবে।

আকাশ বাতাস খন্ড করিতে পারে নাই কেহ
তার নীচে বসিয়া আছি, ছিলাম থাকিব।
আমাদের আশ্রয়ের ছায়া দিবে আকাশ তখন,বাতাস দিবে নিরাময়।

আমাদের মৃত্যু নেই
জানে শুধু দুইজন– আকাশ ও বাতাস।
আসলে ইহাদের স্থান
মানব হৃদয়ে আশ্বাস ও বিশ্বাস।