আজ নরসিংহের আবির্ভাব দিবসঃ অবতকের বিশেষ প্রতিবেদন

আমাকে নৃসিংহ করে দাও,
হিরণ্যকশ্যপকে চাই আমি
তমাল সাহা

প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিবাত্যা ক্রমে ক্রমে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে জেনে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়ি। এই উপকূল উপত্যকা জুড়ে হিরণ্যকশ্যপেরা প্রহ্লাদবধের মহড়া দেয়। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে কুরুক্ষেত্র আর দিল্লির প্রান্তরে সীমাবদ্ধ থাকেনা। খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে ছড়িয়ে পড়ে যমুনা সবরমতী গাঙ্গেয় তীরে। ক্রমে ক্রমে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গাবাজ এই কুরুক্ষেত্র তার সাম্রাজ্য আরো বিস্তার করে।

মোচা শব্দটি থেকে মোচন শব্দটি এসেছে কিনা আমি জানিনা। বিধ্বংসী ঝড়ের পাখি যদি ডানা উন্মোচন করে ক্রমাগত বিস্তৃত হতে থাকে তবে তার নিষ্ঠুর বায়ুপ্রবাহে উড়ে যাবে বস্তির চালা, ছড়ানো ছিটানো বাসনকোষন গড়িয়ে পড়বে উঠোনে দাওয়ায়। উপসাগরের জলে ভেসে যাবে ভাতশূন্য হাঁড়ি। পথে প্রান্তরে এদিক ওদিক ভূপতিত হয়ে স্তব্ধ শয়ানে থাকবে বিশাল বিশাল বৃক্ষসমূহের লাশ।

ত্রাণ পরিত্রাণ শব্দ দুটি হুড়মুড় করে নেমে পড়বে এই বিস্তীর্ণ চরাচরে। হিরণ্যকশ্যপেরা তৈরি হয়ে আছে। তাদের চোখ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে‌। ঘুম ঘোরে তারা পত্নীপ্রিয়াকে চাল ও ত্রিফল ভেবে জড়িয়ে ধরে সুখনিদ্রা যায়….

জবাকুসুমসঙ্কাশ নয়, আমি এখন দেখি ঘোলাটে ধোঁয়াশাময় আকাশ।
ঘুম থেকে উঠে পড়ি।চৈতন্যডোবা ঘাটে গিয়ে বসি। নদীও ছোট হয়ে আসে। মাঝে বিশাল চর। ওপারে কোনো কলকারখানা দেখা যায় না।
পরশু দুটি কিশোর পুণ্যতোয়া নদীতে তলিয়ে গেছে। যদি ভেসে ওঠে, আমি জলপ্রবাহের দিকে তাকিয়ে থাকি। নদী নারী, কি করে প্রজন্মকে গ্রাস করে?
সেই কবেকার প্রিয় নারী রুমি-দির কথা মনে পড়ে। তার কথা আজ রাখি। নটবর ঘাটে দাহপর্ব দেখতে যাই নি আজ। জলতরঙ্গ শিশুকেও ছাড়ে না। শিশুদেহ নিয়ে জলের এ কোন মারণ খেলা!

স্বর্গীয় আকাশে চলে যাবে পরলোকগামী। পিতাহি স্বর্গ…
পবিত্র গঙ্গা পারে ঘাটশ্রাদ্ধে মেতেছে দুটি যুবক। সঙ্গে সহযোদ্ধা দুই নারী। লাল পেড়ে কোরা শাড়ি ওদের পরিধেয়। আমি নারী দুটি দিকে তাকিয়ে থাকি‌।
আমার আকর্ণ প্রবেশ করে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ। আমিও শুদ্ধ হই বোধ করি।

আজ বৈশাখ মাসের শুক্লা চতুর্দশী, বৃহস্পতিবার। অন্যায়ের পরাজয়, ধর্মের জয়, ভক্তের জয়— বিজয় দিবস।
নর ও সিংহের দ্বৈত সত্তা নিয়ে আমি নৃসিংহ হবো আজ।
পবিত্র বারি পার্শ্বে দাঁড়িয়ে ঘোলাটে আকাশে অবস্থানরত শ্বেত প্রভাময় সূর্যের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করি, হে বিবস্বান! আমাকে নরসিংহ করে দাও। আমাকে হিংস্র নখর ও করাল দন্ত প্রদান করো হে প্রভু! হিরণ্যকশ্যপের বক্ষোরক্ত পান করার বড়ই আগ্রহ আমার!