আবিস্কার হয়েছে মাছের ভ্যাকসিন

অবতক খবর,১১ আগস্ট :: রাজ্যে প্রথম মাছের টিকাকরন এগরা-১নম্বর ব্লকের তিনটি মাছের হ্যাচারীতে, উৎপাদিত হবে নিরোগ স্বাস্থ্যকর মাছ । মৎস্যক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করল এগরা-১নম্বর ব্লক মৎস্য বিভাগ।

অকাল বৃষ্টি কিংবা একটানা চড়া রৌদ্র , ঋতুর সময়কাল বর্তমানে অনিয়মিত পরিবেশের খামকেয়ালিপনায় আর পরিবেশদূষনে মাছের প্রজননে গভীর প্রভাব পড়ছে । জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কম বৃষ্টিপাতের ফলে হ্যাচারিতে মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রজননের অনুকূল পরিবেশ না পাওয়া ও তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে হ্যাচারিতে মাছ কৃত্রিম প্রজননে সাড়া দিচ্ছে না। পেটে ডিম আসলেও ডিম ছাড়ছে না।মাছ সহজে রোগাক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুহার বেড়ে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদন কম হচ্ছে ও চাষিদের আয় কমে যাচ্ছে।মাছ চাষিরা যেমন সমস্যায় পড়েছেন তেমনি চিন্তিত দেশের বিজ্ঞানী মহল ।

আর এই সমস্যার সমাধানে আমাদের দেশের মৎস্য বিজ্ঞানী তৈরি করেছেন অভিনব “মাছের-টীকা” বা ভ্যাকসিন যার নাম দেওয়া হয়েছে “সিফা-ব্রুড-ভ্যাক” ।

স্বাস্থ্যকর ও বিভিন্ন ধরনের রোগপ্রতিরোধকারি অধিক সংখ্যক মাছের চারাপোনা ( স্পন ও ফ্রাই) তৈরির মাধ্যমে, মাছের উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি করতে কেন্দ্রীয় মিঠাজল মৎস্য গবেষনা কেন্দ্র , ভুবনেশ্বর, ওডিশা- কতৃক উদ্ভাবিত প্রজনন যোগ্য স্ত্রী মাছের ( ফিমেল ব্রূড ফিশ) টিকা বা ভ্যাকসিন “সিফা-ব্রুড-ভ্যাক” এর প্রথম চাষি পর্যায় প্রয়োগ শুরু হল পূর্বমেদিনীপুর জেলার এগরা-১ নম্বর ব্লকের তিনটি মাছের হ্যাচারিতে।

মৎস্য বিজ্ঞানী ডক্টর মৃনাল সামন্ত ও ব্লকের মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক সুমন কুমার সাহুর তত্বাবধানে এগরার সাতখন্ড গ্রামের উত্তম মিদ্যার বাটা, সরপুঁটি মাছ হ্যাচারীতে, বাগমারী গ্রামের কান্টু গিরির মাগুর শিঙি মাছের হ্যাচারীতে ও অরুয়া গ্রামের জগন্নাথ আইচের রুই, কাতলা মাছের হ্যাচারীতে প্রজননক্ষম মাছের টিকাকরন হয়।

১০ই আগষ্ট ২০২২ বুধবার এগরা-১ নম্বর ব্লকের কনফারেন্স হলে মাছের টিকা প্রয়োগ সংক্রান্ত এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, “সিফা-ব্রুড-ভ্যাক” টিকার আবিস্কর্তা সিফা-র প্রিন্সিপাল সায়েনটিস্ট ডক্টর মৃনাল সামন্ত , এছাড়া ছিলেন, এগরা-১ নম্বর ব্লকের বিডিও সুমন ঘোষ, এগরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমিয় রাজ, মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ অভিম্যুনু দাস, এগরা-১ এর মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক সুমন কুমার সাহু সহ অন্যান্য বিশিষ্ট বর্গ।

সিফার বিজ্ঞানী ডঃ মৃনাল সামন্ত জানান যে, “সিফা-ব্রুড-ভ্যাক” এটি হল এক ধরনের টিকা যেটা কিনা প্রজনন যোগ্য স্ত্রী মাছ ( ফিমেল ব্রুড ফিশ) কে দেওয়া হয় । এখনো পর্যন্ত রুই, কাতলা, সরপুঁটি, ট্যাংরা, কই , ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে এর সুফল দেখা হয়েছে। অন্যান্য ধরনের মাছের ওপরও প্রয়োগের গবেষনা চলছে । তিনি আরো জানান, যে রাজ্যে প্রথম এগরা-১ নম্বর ব্লকের তিনটি মাছের হ্যাচারীতে এই টিকাকরন শুরু হল , এর সিফলতা রাজ্যের অন্যন্য হ্যাচারী মালিকদের উৎসাহিত করবে।

এগরা-১ নম্বর ব্লকের মৎস্যচাষ সম্প্রসারন আধিকারিক সুমন কুমার সাহু বলেন, আধুনিক এই মৎস্য প্রযুক্তির সাথে সরকারি সুফল মাছ চাষিদের মধ্যে যেমন ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তেমনি নিরোগ- অধিক মাছের উৎপাদনের মাধ্যমে বাজারে মাছের যোগান বাড়াবে।

এগরা-১ নম্বর ব্লকের বিডিও সুমন ঘোষ মাছ চাষিদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, মৎস্য খাতের উন্নয়নে সরকারিভাবে আমরা মাছ চাষির পাশে আছি।

এগরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ অভিম্যুনু দাস বলেন, ব্লকের মৎস্য আধিকারিক সুমনবাবু এলাকার মাছ চাষিদের সাথে নিবিঢ় যোগাযোগ রেখে চলেন, মাছ চাষিরা সকল প্রকার পরামর্শ পাচ্ছন এবং বর্তমানে এলাকায় মহিলাদের যেমন ছোট মাছ চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে তেমনি মাছের হ্যাচারীতে মাছের টিকাকরনে এগরা-১ নম্বর ব্লক মাছের কর্মকান্ডে নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলছে যা সারা রাজ্যের মধ্যে অন্যতম দৃষ্টান্ত।

এগরা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অমিয় রাজ বলেন, আমাদের ব্লকের মৎস্য আধিকারিকের কর্মতৎপরতায় ও এলাকার মাছ চাষিদের উৎসাহে এগরা-১ পঞ্চায়েত সমিতি সারা রাজ্যের মধ্যে মৎস্যক্ষেত্রে এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করল ।

মাছের টিকাকরন কর্মকান্ডকে ঘিরে এলাকায় মাছ চাষিদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। এদিনের আলোচনা সভায় বাইরের জেলার নৈহাটি, বাঁকুড়ার ইত্যাদির উৎসাহী মাছের হ্যাচারি মালিকরাও উপস্থিত ছিলেন।