অবতক খবর,২১ জুলাইঃ বাতাসে বারুদের গন্ধ কার লেখায় যেন পড়েছিলুম। বাতাসের গায়ে এখন ভুর ভুর চোলাইয়ের গন্ধ।

নারীদের বুকে চন্দনের গন্ধ থাকে, এক কবি লিখেছিল। আমি তো শুধু আমার প্রেমিকার বুকে ঘামের গন্ধ পেয়েছিলুম।

বাতাস ইথাইলের সঙ্গে মিথাইল অ্যালকোহলের গন্ধ, মৃত্যুসংবাদ ও শোকাহত বিলাপ নিয়ে বয়ে যায় আর বলে,আইন আইনের পথে চলবে। দলের নেতা কর্মী হলেও অভিযুক্ত কাউকেই ছাড়া হবে না। এটা এখন একটা প্রবাদ বাক্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‌

চোলাই মদ মানব নিধনের একটি বড় শিল্প। আজ শহীদ মিনারে শহীদ মেলায় তষ ঘোষণা হতে পারে নিহতদের জন্য কত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মদারু বা নেশারুরা মানব সম্পদ।এরাও শহীদ। ফাঁসির মতো এরা মদ পান করে নিহত হয়েছে। জেনেশুনে বিষ করেছি পান। কে লিখেছে?

চোলাই মদ একটি নতুন শিল্প। এটি কেন্দ্র ও রাজ্য যুক্ত এমন একটি শিল্প যা বিশ্বে অদ্বিতীয়। এটি একটি অর্থকরী শিল্প। এর সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে ট্রেনের গার্ড ড্রাইভার রেল পুলিশ যুক্ত। আর রাজ্যস্তরে এর সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় এম এল এ, কাউন্সিলর, পাড়ার দাদা এবং পুলিশ প্রশাসন। তার মানে এককথায় এটি কেন্দ্র রাজ্য যৌথ প্রকল্পের এটি অর্থকরী শিল্প। এর সঙ্গে যেহেতু মানব নিধন জড়িত সেহেতু বেকার মুক্তি শিল্পও বলা যেতে পারে।

মদ শব্দটি কবিরাও পছন্দ করেন। রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দ সুভাষ মুখোপাধ্যায় কবিতায় নীল মদ তরমুজ মদ এমন সব শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।

হাওড়া-বর্ধমান দুই জেলা মিলিয়ে দুমাসের মধ্যে বিষ মদ পানে মৃত্যু হয়েছে মোট ৩০ জনের। বর্ধমান শহরের সর্বমঙ্গলা এলাকায় এর আগে এই ঘটনা ঘটেছে। এবার ২০ জুলাই ২০২২ তার পুনরাবৃত্তি ঘটলো হাওড়ার ঘুসুড়ির মালিপাঁচঘরা থানা এলাকায় গজনন বস্তিতে।

নামগুলো খুবই সুন্দর সর্বমঙ্গলা, গজানন বস্তি। বর্ধমানের মৃতরা মা হোটেলে বসে মদ খেয়েছিল। মা-মদ-মৃত্যু-সর্বমঙ্গলা- গজানন সব একাকার হয়ে গিয়েছে। ‌জয় মা।

আর গজানন সে তো গণেশ। সে তো জনগণের ঈশ। সে তো জনশ্রেষ্ঠ। ফলত,গণ ফিনিশ।

একজন শব্দবিদ বলেন, চোলাই শব্দটি ব্যঞ্জনাবাহী। এতে চলে যাবার সুর আছে। চলো যাই, এই শব্দটি উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যে চোলাইয়ে পরিণত হতে পারে। বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী বর্ণলোপ এবং স্থান পরিবর্তনের কারণে এমন অনেক নতুন শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করেন, চোলাই শব্দের আগমন চুয়ানো থেকে। চুয়ানো মানে পরিস্রুতকরণ– এটি একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া। চোলাই তৈরিতে এই পরিস্রুতকরণ প্রক্রিয়া অর্থাৎ চুয়ানোর বিষয়টি আছে। ‌তাই হয়তো চোলাই বলা হয়।

রবীন্দ্রনাথের লেখায় আছে যতদূর মনে পড়ে হয়তো বাক্যটি এমনই–কলিকাতায় আবকারি বিভাগে স্থান পাইয়াছে। নজরুলের কোনো লেখায় আছে — মদ চোলাই-এর এই দোকান। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন, জানিস তো বল কি যে হল ফল আবকারী যুদ্ধের।

আবগার শব্দের অর্থ মদ বা মাদকদ্রব্য প্রস্তুতকারী বা বিক্রয়কারী। এটি ফারসি শব্দ। চোলানা শব্দ থেকেও চোলাই শব্দটির আগমন ঘটতে পারে।

এই গানটি শুনুন। খুবষষবহুশ্রুত এই গান– সাহেব লিবো পিঠের চাম

এই যদুরাম, ফাঁকি দিয়া চোলাই লিয়া যান।