অবতক খবর,১৮ আগস্টঃ দেশ তখন স্বাধীন হওয়ার মুখে। দেশভাগের পরে নদিয়া জেলার কুষ্ঠিয়াসহ কয়েকটি মহকুমা পাকিস্তানে চলে গেলেও, হিন্দু অধ্যুষিত রাণাঘাট ও কৃষ্ণনগর রয়ে যাবে ভারতেই, এমনটাই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু 12ই আগস্ট 1947 এ রেডিও তে ঘোষণা হয়েছিল দেশ স্বাধীন হচ্ছে আর নদীয়া জেলার নবদ্বীপ বাদে শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর ও অন্যান্য মহকুমা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে পড়েছে। খবর শুনে গোটা শহরবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়লো ।

বাড়িতে মহিলারা উনুন জ্বলানো বন্ধ করে দিলেন, শান্তিপুর সহ নদীয়ার কিছু বীরপুরুষের নেতৃত্বে মিটিং মিছিলে বন্ধ হলো এত্বত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ।

এদিকে সেই সময় শহরে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান নাগরিকরা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ওপর 15 তারিখে পাকিস্তানের পতাকা তুললো , পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনিতে মুখর হলো নদীয়া ও শান্তিপুর শহরের রাজপথ । কৃষ্ণনগরের রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী ইংরেজদের এই কাজ মেনে নিলেন না। পুত্র সৌরীশ ও নদীয়া সহ শান্তিপুরের পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্র সহ কিছু গণ্যমান্য কয়েকজনকে নিয়ে সোজা গিয়ে দেখা করলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে।

কান্ডটা ঘটেছিল আসলে Radcliffe সাহেবের ম্যাপ আঁকার ভুলে, কোন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ছিলোনা । তাই যখন ঘটনা Mountbatten এর কানে গেল তখন হুকুম দিলেন এক্ষুনি সংশোধন করতে । কিন্ত বললেই কি হয় ? সবকিছু ঠিকঠাক করে আসতে হয়ে গেল 17 তারিখের রাত ।

সতেরোই অগাস্ট রাতে রেডিওতে ঘোষণা হল যে, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর ও রাণাঘাট ভারতের মানচিত্রেই থাকছে। উল্লাসে ফেটে পড়ল এলাকার মানুষ।

ঝটপট রাজবাড়ী থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে তোলা হলো তেরঙ্গা । আঠারোই অগাস্ট স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলিত হল নদিয়া সহ শান্তিপুরের বিভিন্ন এলাকায়। আজও তাই নদিয়ার বেশ কিছু অংশের অধিবাসীবৃন্দ 18 আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করেন !

স্বাধীনত্বর নামটি ছিলো নবদ্বীপ।

যা হাজার ১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নদীয়া।

এভাবে রুখে না-দাঁড়ালে, সেদিন হয়তো শান্তিপুর সহ রাণাঘাট আর কৃষ্ণনগর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত। স্বাধীনতার ৭৫ বছর ফুর্তি হিসাবে গৌরবান্বিত হলেও, পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রের শান্তিপুর সহ বেশ কিছু এলাকা আজ নদিয়া নাম থেকে ব্রাত্য হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ? সম্প্রতি জেলা ভাগ নিয়ে নাগরিক বিক্ষোভের সামনে এমনই প্রশ্ন চিহ্ন দাঁড়িয়ে।

তবে নামকরণ নিয়ে এত বিক্ষোভ আন্দোলন সংঘটিত হলেও বর্তমান রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন সার্থক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাই আজ ১৮ আগস্ট ভারত অন্তর্ভুক্তি দিবস পালন কারীদের মধ্যে সেই প্রশ্নই উঠে এসেছে বারবার। শান্তিপুর ডাকঘর মোড়ে নেতাজি পদতলে, অন্তর্ভুক্তি দিবস পালনে উঠে আসলো সেই সমস্ত প্রশ্ন।

শুধু শান্তিপুর নয়, সরাসরি আবেগ না থাকলেও নাকাশিপাড়া কালিগঞ্জ ধুবুলিয়া কৃষ্ণনগর বেথুয়া ডহরি সর্বত্র অন্তর্ভুক্তি দিবস পালনে বাড়তি আবেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে এ বছর। কোথাও সাইকেল র‍্যালি কোথাও বা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মূল বিষয় উঠে আসছে অখন্ড নদীয়ার বিষয়টি।