আজ হেলেন কেলারের জন্মদিনঃ

স্পর্শ ও অনুভবের কথা যে জানিয়ে দিয়েছিল সমগ্র বিশ্বকে 

 

অবতক -এর বিশেষ প্রতিবেদনঃ

আজ এখানে বৃষ্টি ঝরে। গাছের পাতায় ধানক্ষেতে প্রান্তরে নদীর জলের বুকে। মেঘমল্লার বর্ষামঙ্গল গায়। তখন তোমার কথা মনে পড়ে। আমাদের এই আষাঢ়স্য দিবসেই জন্ম হয়েছিল তোমার আলাবামা, আমেরিকার এক জনপদে।

তোমার জন্মদিন আসে।স্পর্শ শব্দটি কত কাছে, অনেক নিকটে সান্নিধ্যের ঘনিষ্ঠতা পায়। অনুভব!অনুভব! সংবেদন! সংবেদন!–এইসব শব্দগুলি বিশ্বচরাচর ঘুরে বেড়ায়। আমি ভাবি স্পর্শ কত দূরে যেতে পারে কতদূর যায়! হৃদয় অনুভব কিভাবে বিমূর্ত হয়ে ঢুকে পড়ে তোমার মুখাবয়বের ভাষায় তা তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়। তুমি দেখতে পেতে না, শুনতে পেতে না,বলতে পারতে না কিছু। অন্ধ মূক বধির শব্দগুলি কিভাবে হেরে যায়, হারতে হারতে তোমার কাছে হয়ে পড়ে যেন নতজানু।

তুমি শিখিয়েছিলে স্পর্শেই তো বাস্তবতা–উপলব্ধির জগত ও জীবন। জলের ধারার স্পর্শের তুমি শিখে যাও জল শব্দটি, শিক্ষার নতুন পদ্ধতি। শিখে যাও আরো কতসব বস্তু গ্ৰাহ্যের আকৃতি-প্রকৃতি। আমার মনে পড়ে যায় কুয়োতলা অভিযান,তুমি আর তোমার শিক্ষিকা অ্যান সুলেভান— হাতের উপর দীরে এবং বেগে জল ঢেলে দেবার দৃশ্য, লতা ফুলের ঘ্রাণ— কিভাবে শিখতে হয় শিক্ষার ছিল এ এক নতুন অভিযান!

আলোর দিকে মুখ থাকলে ছায়া দেখতে পাবে না কখনো। জীবন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ। তাকে মনোরম করে তোলাই তোমার দায়। তার জন্য করো পূর্ণ আয়োজন।

সুন্দরতম জিনিসগুলি দৃশ্য ও স্পর্শের বাইরে থাকলেও হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। এসব বলো তুমি কি করে কে জানি,

যখন দর্শন শ্রবণ কথন– ইন্দ্রিয়সমূহ হারিয়ে ফেলেছো তুমি।

তুমি কি আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিলে কোনোদিন!! পৃথিবীর সুন্দরতম মুখখানি ধরা আছে আয়নার ভেতর, তুমি না জানলেও আমরা জানি।

জীবনকে ভালোবাসো বলেই রাজনৈতিক হয়ে ওঠো।আর যুদ্ধের বিরোধিতা করো। তুমি প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকারের পাশে, যুদ্ধাহত সৈনিকদের কাছে এসে দাঁড়াও।কি করে একটি নারী শ্রমিকের পক্ষে হাঁটে,এই দুর্গম সময়েও আমি ভাবি,আমাকে ভাবায়। তুমি বলো, একা আমি একটা কিছু করা যায়। ‌আমি থেকে আমরা হলে অনেক অনেক কিছু করা যায়। অনেক হাত প্রসারিত হলে পৃথিবী পূর্ণতা পায়।

১৯৩০ সাল কে ভুলতে পারে? রবীন্দ্রনাথ তোমার হাতের আঙুল ধরে পড়ালো তার কবিতা। তোমার হাতে নিজের আঙুলে লিখে চলে তার গান। আর রবীন্দ্রনাথকে দেখলে তুমি কেমন করে? তার অঙ্গসমূহ স্পর্শ করে। আর সেই গানটি, আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী —তুমি অনুভব করেছিলে কি সেই গান? তুমি তো রবীননাথের গানটি বোঝার চেষ্টা করেছিল তার ওষ্ঠ ছুঁয়ে ছুঁয়ে!

এসো,আমরা বিশ্বাস রাখি ,খুলে দাও দরজা অন্ধকারের বাইরে— এসব বইগুলোর মধ্য দিয়ে তুমি কি বলতে চেয়েছিলে আমরা জেনে গেছি। ডেলিভারেন্স– চলচ্চিত্রের নির্দেশনা করেছিলে তুমি ভাবা যায়?আর নিজের ভূমিকায় নিজেই অভিনয় করে জগতকে, জীবনকে বুঝাতে চেয়েছিলে আমাদের বিষাদ

কোথায়! এসব তোমার চলমান চিত্রে হৃদয়গ্রাহ্য হয়ে উঠেছিল অনুপম ভাষায়।