অবতক খবর,১৪ এপ্রিল: হে আমার কাঞ্চন পল্লী!হে আমার কাঁচরাপাড়া! কাঁচরাপাড়া আমার ঐতিহ্যবাহী শহর। কাঁচরাপাড়া একটি শ্রমজীবী অধ্যুষিত শ্রমিষ্ঠ শহর। এখানে মানুষ লড়াই করে বাঁচে।এই শহরের বৈচিত্র্য আছে। এখানে বণিক যেমন আছে, বিত্তবান যেমন আছে,তেমন বিদগ্ধজন আছে। এখানে আছে রাজনৈতিক চেতনা সম্পন্ন মানুষ। আবার আছে সামাজিক বেশ্যাবৃত্তির মস্তান। এই হচ্ছে কাঁচরাপাড়ার জীবন ও ঐতিহ্যের গান।

 

কাঁচরাপাড়ার চৈত্র সেল বোধকরি বিশ্ব বিখ্যাত। এবার শুনেছি কিছু কিছু ব্যবসায়ী লকডাউনের আগে, এই ভয়ার্ত পরিবেশের আগে বিশাল পরিমাণ অর্থের চৈত্র সেলের মাল তুলে এক বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞের আয়োজন করেছিল। চুপচাপ তারা। শুনশান তারা। সেইসব ব্যবসায়ীদের নাম উল্লেখ আজ নিষ্প্রয়োজন।

শহর আজ হতাশার শহর, দুঃখের শহর। শ্রম দিয়েই কাঁচরাপাড়া বাঁচে। কারণ এটি স্বেদ ও ঘামের শহর। ফুটপাতের হকাররা এই শহরে থাকলেও দূর দূরান্ত মদনপুর, শিমুরালি, রানাঘাট থেকে এখানে ছুটে আসে। একদিকে উত্তর ২৪ পরগণা অন্যদিকে হুগলি,আর একদিকে নদীয়া ঘিরেছে এই শহর। এই শহর জুড়ে আছে চৈত্র সেল। আজ সেই সেল নেই। রবীন্দ্র পথে নেই ফেরিওয়ালারা। ‌ কত লাথি-ঝাঁটা তিরস্কার জুটেছে তাদের কপালে। তবুও তারা হাল ছাড়েনি, লড়ে গেছে।

আজ করোনা তাদের কেড়ে নিয়েছে মুখের গ্রাস। লকডাউনের সন্ত্রাস কেড়ে নিয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতার হাস্যমুখ। কত চেনা পরিচয় আজ ম্লান। পয়লা বৈশাখ– শুভ নববর্ষ। সে এক বিশাল উৎসব। সেদিন ক্রেতা নয়, তারা আমন্ত্রিত জন। সাদরে তাদের গ্রহণ করেন বণিকজন, শ্রেষ্ঠীরা।

এবারের পয়লা বৈশাখ ১৪২৭। ইংরেজি ১৪ই এপ্রিল ২০২০,চলে গেল অপমানিত হতমান হয়ে। কি অপরাধ ক্রেতা বিক্রেতার? কি পাপ আমাদের? কিছু ব্যবসায়ী ঐতিহ্য বজায় রাখলেন। যেন চৌর্যবৃত্তিতে নেমেছেন। ‌লকডাউনকে উপেক্ষা করে দোকানের-বিপণির শুভ কামনায় কোনমতে ঝাঁপটি খুললেন বা তুললেন। অপরাধীর মতো সিদ্ধিদাতার পুজোটি সারলেন। এই শহরের কয়েকজন স্বর্ণশিল্পী, কয়েকজন ছোট ব্যবসায়ী, কয়েকজন উচ্চবিত্ত বাঙালি, এমনকি অবাঙালি ব্যবসায়ী ম্লানমুখে জানালেন, এমন পয়লা বৈশাখ মানা যায়! মিষ্টির প্যাকেট, নতুন ক্যালেন্ডার, ক্রেতাদের হাস্যমুখ দেখা থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা!

শুনশান, সাড়া শব্দহীন এই শহর। রৌদ্রাক্ত রাস্তা খাঁ খাঁ করছে এই শহর। মেহনতিদেরএই শহর, শ্রমিষ্ঠদের এই শহর, লড়ে যাওয়া এই শহর।

পথেঘাটে মানুষ নেই,দোকানে সরবতা নেই। নেই মুখরতা, স্বাগত সম্ভাষণ। শুভ মহরত হালখাতা। লিখে গেল নতুন আশ্চর্য নীরবতা। স্মৃতি ধূসর বেলায় এই শহর কাঁচরাপাড়া একদিন খুঁজে পাবে ২০২০ সালের এই ইতিহাস। চৈত্রের চিতাভস্ম উড়ায়ে পয়লা বৈশাখের এই পাতা সে দেখবে আর ভাববে কেমন ছিল,কি ঘটনা ঘটেছিল এই শহরে।