অবতক খবর,১ অক্টোবর: আজ ১লা অক্টোবর শান্তিপুর পৌরসভার ১৬৮ তম জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠা দিবস। পৌর আইনে গঠিত এটি দ্বিতীয় প্রাচীন পৌরসভা।প্রথম পৌরসভা গঠিত হয় দার্জিলিং এ।১৮৫৩ সালের ১লা অক্টোবর এই পৌরসভার প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।সেই অর্থে এই দিনটিকেই শান্তিপুর পৌরসভার জন্মদিন ধরা হয়।শান্তিপুর পূর্বে একটি মহকুমা শহর ছিলো।১৮৬৩ সালে রাণাঘাটে নতুন মহকুমা গঠিত হলে শান্তিপুর মহকুমার বিলোপ হয়।তার আগে ফৌজদারী ও দেওয়ানী আদালত শান্তিপুরেই বসতো।এখন যেটা শান্তিপুর থানার পুরোনো ভবনটি রয়েছে সেটাই ছিলো আদালত।এখানেই প্রথম পৌরসভার কাজ আরম্ভ হয়।পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন পদাধিকার বলে তৎকালীন মহকুমাশাসক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষাল।অন্য দুজন হলেন কৃষ্ণবল্লভ প্রামানিক ও শিবচন্দ্র পাল।১৮৫০ সালে পৌরশাসন সম্বন্ধীয় ২৬ আইন কার্যকর হয়।শান্তিপুরের কয়েকজন নাগরিক শান্তিপুরে পৌরসভা গঠনের আবেদন করেন।এঁদের নের্তৃত্বে ছিলেন জমিদার মতি রায়।মতিগঞ্জ যাঁর নাম বহন করছে। আবেদন পেয়ে তিনজন কমিশনার নিয়ে গভর্ণর পৌরসভা গঠন করতে নির্দেশ দেন।সভাপতি করা হয় ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষালকে।প্রথম দিনের কার্যবিবরণীতে এই তিনজন স্বাক্ষর করেন।প্রথম সভার উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত হলো শহর পাহারা দেওয়ার জন্য মাসিক ৭ টাকা বেতনে দুজন জমাদার ও মাসিক ৫ টাকা বেতনে আটজন বরকন্দাজ নিযুক্ত করা হবে।পৌরসভা প্রথম যে সমস্ত বিষয়ের ওপর কর বসায়, তার থেকে দেখা যায় ঐ সময় শান্তিপুরে নীল, সিল্ক ও চিনির কারখানা ছিলো তাদের ওপর কর বসানো হয়,একটি ‘গহনা’নৌকো যাত্রী পরিবহন করতো তার ওপরেও কর ধার্য্য হয়।আর একটি অদ্ভুত বিষয়ের ওপর কর বসানো হয়েছিল – তা হলো বিয়ের ওপর কর আর বারোয়ারী পুজোর যাত্রার ওপর কর।পরে অবশ্য সরকারী নির্দেশে এই কর দুটি তুলে নেওয়া হয়েছিলো।
শান্তিপুর পৌরসভার এখন যে ভবনটি রয়েছে চোরপুকুরের ধারে, তা তৈরীর জন্য ১৮৮৭ সালের ২৬ শে জানুয়ারী তারিখে পৌর কমিশনারদের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।তখন রবিবার বা ছুটির দিনেও অধিবেশন বসতো বলে জানা যায়।ভবনটি তৈরী করতে খরচ হয়েছিলো ৮৭৬৬ টাকা।তখন ইটের দাম ছিলো ৭ টাকা প্রতি ১ হাজার।তবে এই ভবন নির্মানে আপত্তি জানিয়ে কয়েকজন নাগরিক দরখাস্ত পেশ করেন। কারনটা হলো – এখানে অফিস হলে যে সমস্ত মহিলারা চোরপুকুরে জল নিতে আসে তাদের অসুবিধা হবে।অবশ্য এই আপত্তি সভাতে নাকচ হয়ে যায়।
পৌরসভা চালু হওয়ার পর পরবর্তী সভা ২৬ শে অক্টোবরের সভায় বাসযোগ্য প্রতি বাড়ী পিছু ১ আনা থেকে দুটাকা কর বসানো হয়েছিল। বাগানে যা ফসল ফলবে প্রতি ঋতুতে তার ১০ শতাংশ কর বসলো।প্রশ্ন উঠলো বাঁশকে কি ফসল ধরা হবে? আলোচনায় ঠিক হলো বাঁশঝাড়েও একই হিসাবে কর বসবে।জ্বালানী কাঠ বোঝাই গাড়ী পিছু ১ পয়সা কর,অন্য কিছু বোঝাই গাড়ী পিছু ২ পয়সা কর বসবে। গাড়ী বলতে গরুর গাড়ীই তখন চলতো।এইভাবে বিভিন্ন ভাবে ঐ দিন কর আরোপ করা হয়।
ঐ সভাতেই কতগুলো নিষেধাজ্ঞাও জারী করা হয়েছিল। সেসবই আজ ইতিহাস।
প্রথমে সরকারী প্রতিনিধি অর্থাৎ এস ডি ও পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান হতেন।যখন শান্তিপুর মহকুমা ছিলো তখন শান্তিপুরের মহকুমা শাসক চেয়ারম্যান হতেন পরে রাণাঘাটে মহকুমা স্থানান্তরিত হলে রাণাঘাটের মহকুমা শাসক শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হতেন।ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিশনাররাও সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন।প্রতিবছর পৌরসভার মিটিং এ লটারী করে ঠিক হতো কোন কোন কমিশনার অবসর নেবেন।পরবর্তীতে নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দ্বারা শান্তিপুর পৌরসভা পরিচালনা করেন। সবাই জানেন এখন অবশ্য সাময়িক ভাবে সরকার কর্তৃক মনোনীত প্রশাসক,প্রশাসক পর্ষদ দ্বারা পৌরসভা চলছে।