অবতক খবর,১৮ নভেম্বর: নাগপুরের মহারাজা সাহুজী ভোঁসলের নেতৃত্বে ১৭৪১ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত মারাঠা বাহিনী ছ’বার বাংলা আক্রমণ করে। চার লক্ষ হিন্দুকে নির্বিচারে হত্যা করে। বাংলার অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়। বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁ অবশেষে চুক্তির বিনিময়ে এই আক্রমণ প্রতিহত করেন।

কথিত আছে, বর্গীরা স্থল পথে দাপিয়ে বেড়ালেও হাতি ঘোড়া নিয়ে নদী পথে তাঁরা বিপন্ন হয়ে পড়ে। বেলডাঙ্গা তখন কয়েকটি ছোট ছোট নদীনালা বেষ্টিত জনপদ। হাতি ঘোড়া নিয়ে পড়ল বিপদে। বেলডাঙ্গা উত্তর পাড়া, দেবকুন্ডু গ্রামের পশ্চিমে বসতি পাতে। তাদের গড়, বাথান বেলডাঙ্গার বিভিন্ন পাড়ার পরিচয়ের সঙ্গে আজও যুক্ত।

আজ থেকে প্রায় আড়াই শো বছর আগে বেলডাঙ্গা বড়ো পাড়ার ঘোষবাবুরা প্রথম ছুতোর পাড়ায় বাথান জেরের বুড়ো শিবের পুজো শুরু করেন। কার্তিক সংক্রান্তিতে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। বুড়ো শিবের পুজো মুখ্যত শৈব সম্প্রদায়ের। পরবর্তী কালে হিন্দু সমাজের অন্যান্যরাও এগিয়ে আসেন। তান্ত্রিক সাধকেরা শ্রীরামকৃষ্ণদেবের পূজা করেন। তেমনি বৈষ্ণব সম্প্রদায় শ্রীচৈতন্যদেবের পূজা করেন। কেহ গণেশ, কেহ বা লক্ষীর পূজাও করেন। সবই অনুষ্ঠিত হয় এই কার্তিক সংক্রান্তিতে। কোথাও কোথাও বাবু কার্তিকের পূজা হয়।

অনেকের মনে প্রশ্ন হতে পারে, কার্তিক সংক্রান্তিতে এত বিভিন্ন দেবতার পূজা কেন? আসলে এটা বিভিন্নতা নয়, বরং বৈচিত্র্য। হিন্দু সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য সংহতি ও সম্প্রীতির জন্যই এই বৈচিত্র্য। হাজারো বিভিন্নতার মধ্যেও বেলডাঙ্গার হিন্দু সমাজ কার্তিক লড়াই ঘিরে এক ও ঐক্যবদ্ধ। এটাই এখানের পরম্পরা ও ঐতিহ্য।

এখানে লড়াই বলতে যুদ্ধ বা বিবাদ নয়। বরং প্রতিযোগিতা। সৃজনশীলতা ও উৎকর্ষতার প্রতিযোগিতা। নতুন নতুন ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করার প্রতিযোগিতা। আজকাল নতুন প্রজন্ম যদিও লড়াই বলতে ঠাকুর কাঁধে আগে চলার প্রতিযোগিতাকেই বুঝছে।

বহু পুরানো ঐতিহ্যবাহী কার্তিক লড়াই ক্রমে সার্বজনীন রূপ পাচ্ছে। সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সম্প্রীতির অনাবিল মাধুর্যে বেলডাঙ্গা ভরে উঠছে। দরগাতলায় হিন্দু মুসলমান হাতে হাত মিলিয়ে জল বিতরণ করছে। সম্প্রীতির অনন্য নজির।