আজ বিশ্ব নারী উত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবসঃ

অবতক-এর বিশেষ প্রতিবেদন

ধরিত্রায়নের হাওয়া বিস্তীর্ণ হতে থাকলে জন্মভূমি যখন হাটের দরে বেচে দিতে চায় রাষ্ট্র, তখন মনে পড়ে প্রিয় প্রিয়তর প্রিয়তম ভালোবাসার মুখগুলি—রৌদ্র বিছানো মাটি, মর্মরধ্বনি আকীর্ণ অরণ্য, শৈত্যের প্রবাহ বহমান পার্বত্য পরিবেশ, বর্ষাস্নাত নদী, একদিকে সামুদ্রিক উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে বালুতটে ঝাউ বনের ভেতরে ঢুকে পড়া বাতাসের শব্দ। আর মনে পড়ে কবিতার মুখ।

এসবের মধ্যেই অন্তর্লীন হয়ে থাকে নারী চেতনা। এসব দুর্মর ভাবনা স্মৃতির অলিন্দে কড়া নাড়ে যখন সান্ধ্য আহ্নিকে সাঁতরে উঠে আসে চাঁদ আকাশের গায়ে আর তখনই জেনে যাই আজ নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস।

দিবসটি নারী-নিগ্রহ মানে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদের কথা বলতে চায়। নারী নিগ্রহ নাহলে কবে ইতিহাস জমে ওঠে! রজঃস্বলা কৃষ্ণার বস্ত্রহরণ অথবা আগ্নেয় প্রদাহে শুদ্ধতার পরীক্ষার্থী সীতা, জতুগৃহে নিষাদ মাতার মৃত্যু–এসব পৌরাণিক ইভটিজিং মাত্রা পেয়ে যায় সিলেবাসের পাতায়।

কারা পালন করতে নির্দেশ দেয় এই প্রতিবাদ দিবস? কাদের কাছে নির্দেশ পাঠায়? রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শিত হয় ইউক্রেন নারীদের রোমহর্ষক ধর্ষণ, আফগানিস্থানে বলাৎকৃত নারীদের দীর্ঘশ্বাস,পদ্মা পারে একাত্তরের যুদ্ধে সেইসব হাজার হাজার ধর্ষিতা রমণীদের মুখ মনে পড়ে। পড়শি রাজ্যে মনোরমা থাংজাম আর বঙ্গোপসাগরীয় উপত্যকায় আলো ঝলকানো কলকাতায় পার্ক স্ট্রিটের ছোট ঘটনা ক্রমাগত ছোট থেকে হতে থাকে শাসকের প্রলাপে। কামদুনি, মধ্যমগ্ৰাম শিলিগুড়ির পার্বত্য এলাকা উঠে দাঁড়ায়, পূর্ব মেদিনীপুর নড়ে ওঠে, বীরভূমের হাঁসখালির কন্যাটি লাভ অ্যাফেয়ার্স অথবা প্রেগন্যান্ট অভিধা নিয়ে তোমার সামনে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। শহরতলিতে তোমার বাড়ির কাছে গণধর্ষিতা কিশোরী গুমরে কাঁদে বাসুদেবপুরে। মুল্য কাকে বলে? কাকে বলে দরদাম? তুমি ধর্ষিতার স্বীকৃতির পেয়ে যাবে তনখা ইনাম।

হা! হা! রাষ্ট্র তুমি পালন করবে না নারী উত্ত্যক্তকরণ প্রতিরোধ দিবস।

আর তুমি গুণধর কবি? নিজেকে সরকারি পামোছো বানিয়ে লিখে চলো নারীর অবাস্তব মহিমা।

দিনের আলোয় ফুটপাতে না-খেতে পাওয়া নারীটির বুকসাটা চুপসানো ভাই দেখে রাত লিখি— প্রতিটি নারীর বুকে একটি নদী আছে। প্রতিটি নারীর বুকে বহমান ঢেউ। প্রতিটি নারীর চোখে নক্ষত্র আছে, আছে নাক্ষত্রিক আলো। ওষ্ঠে আছে চন্দনের সুবাস। আর বুকের উপত্যকায় লেগে আছে কমলা লেবুর গন্ধ। নারীর স্পর্শে আছে রমণীয় হাওয়া।

কবিতা কাছে এসো, আমার মনসৃজা!