আজ বিশ্ব গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস
অবতক-এর প্রতিবেদন
এই দগ্ধ মাংসপিন্ডের গন্ধ, এই বুকফাটা আর্তনাদ আর কতদিন কতদূর যাবে…!
কথোপকথনের মতো
তমাল সাহা
কিছুদিন হলো মনসৃজা তেমন কথা বলে না আর। আজ সকালে কাগজগুলো অগোছালোভাবে বিছানার ওপর ছুড়ে দেবার ভঙ্গিতে রেখে যায়। একটা খবরের কাগজের উপরে চায়ের কাপ পড়ে থাকে। ভালো করে আমার দিকে তাকায়ও না। বুঝি মন খারাপ।এখন কাগজগুলো আমার আগেভাগেই পড়ে নেয় আজও নিয়েছে। মন ভালো নেই।
শীত পড়েছে। তাও দেখি মুখে ঘাম। অবয়বে ঘামের বিন্দু ফুটে উঠলে প্রিয় নারীদের অন্যরকম দেখায়!
আজ কপাল থেকে দু ফোঁটা ঘাম চায়ের কাপে পড়েছে, যখন প্লেটটি রাখছিল আমার বিছানার উপর। আমি আড়চোখে দেখেছি। কিছু মনে করিনি। এতো ভালোবাসার মানুষের স্বেদবিন্দু! চা পানের সঙ্গে মিশে যাবে ভালোবাসার স্বাদ। একটু নোনতাও লাগতে পারে, অন্যরকম।
আজ শুক্রবার। তিনটে কাগজ। রীতিমতো মোটা। আমার টেবিলে রেখে গেল। এবার আমি কাগজ খুলি। যোগীরাজ্যে গণহত্যা– দু’বছরের শিশুসহ খুন পরিবার-পরিজন। পাথর দিয়ে থেঁতলে হত্যা। আগুন দেওয়া হয়েছে বাড়িতে। পুলিশ এসেছে। ভ্যাজাইনার সোয়াবও নিয়ে গিয়েছে। তদন্ত হবে।
কিছুক্ষণ বাদে শাড়ির আঁচলে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মনসৃজা আবার এলো এবং আমার পাশে বসলো।
তাহলে কি বলো, বাতাসের মতো, ফুলের সুগন্ধের মতো, মাংসপোড়া গন্ধের মতো ছড়াচ্ছে?
আমি বলি, কি ছড়াচ্ছে?
মনসৃজা বলে, হত্যা ছড়াচ্ছে! হত্যা হাত পা নিয়ে জন্মেছে। সে এখন দূর থেকে দূরে হেঁটে যাচ্ছে।
আমি বলি, না। তা ঠিক নয় তবে…
পদ্ধতি তো একই। পদ্ধতিতে কি পূর্ব থেকে উত্তরে কোন তফাৎ আছে? পূর্ব উত্তর দিকের নাম শুধু পাল্টায়। বিষয়টি তো একই থাকে। দিল্লি থেকে হাথরস-হাঁসখালি, বগটুই থেকে প্রয়াগরাজ, এতে তফাৎ কোথায়?
জাহাঙ্গীরপুরি! মানুষকে আশ্রয়হীন করে দাও। এও তো হত্যা! মাথা গোঁজার ঠাঁইকে ভাঙচুর করে দাও বুলডোজার চালিয়ে। এটা খুন নয়?
মনে করো তুমি বাড়ি নেই বা আছো। আমি আর মেয়েটা রয়েছি। উত্তর-পূর্ব দেশের ঝড় দুদ্দার বেগে ঢুকে গেল ঘরে। যা হবার তাই হলো। তোমার বইঘর সহ বাড়িটা দাউদাউ জ্বলতে লাগলো।
আমি চুপ থাকি। গালে হাত দিয়ে বসে পড়ি। আমি কিছুক্ষণ পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম পাঠাবে দল।
ডেথ রেজিস্টার খাতা থাকবে তাদের হাতে!
আমি একা হতে থাকি ক্রমাগত….