শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং কাঁচরাপাড়া। 

তমাল সাহা

 

কাঁচরাপাড়ার মাটি খনন করলেই উঠে আসে ইতিহাস। কত অজানা সম্পদ যে এখানে লুকানো আছে! আমি গালে হাত দিয়ে ভাবি!

আজ ৬ জুলাই,কাঁচরাপাড়ায় পালিত হচ্ছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ১২০তম জন্মদিন।‌

১৯১৮ সালে কাঁচরাপাড়া স্টেশনে তাঁর জন্মদিনে বিজেপির পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল। ইংরেজি স্লোগানে ধ্বনি উঠেছিল “Happy Birthday to you”. শ্যামাপ্রসাদ জিন্দাবাদ, শ্যামাপ্রসাদ অমর রহে এমন ধ্বনি ওঠে নি।

শ্যামাপ্রসাদ হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা। ৬ এপ্রিল, ১৯৮০ এই দলটি অটল বিহারী বাজপেয়ী ও এল কে আডবানীর নেতৃত্বে বিজেপিতে রূপান্তরিত হয়। জনসংঘের প্রতীক ছিল প্রদীপ। বিজেপির প্রতীক হলো পদ্মফুল।

শ্যামাপ্রসাদ ভারতবর্ষের অন্যতম রাজনৈতিক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং বাংলার ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ বলে কথিত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পুত্র।

শ্যামাপ্রসাদ ১৯৫২ সালে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত প্রথম সাংসদ। তিনি ভারতবর্ষের প্রথম স্বাধীন শিল্প ও সরবরাহ মন্ত্রী। রাজনৈতিকভাবে প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর বিরোধী ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন হিন্দুত্ববাদী এবং ভারত বিভাজনের বিপক্ষে সোচ্চার।

জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ নং ধারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’এক দেশ মে দো বিধান, দো প্রধান ও দো নিশান নহি চলেঙ্গে।’ এই নিয়ে আন্দোলনে কাশ্মীরে প্রবেশ করলে ১১ই মে ১৯৫৩ তাঁকে গ্ৰেপ্তার করা হয়। জেলবন্দী অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর আন্দোলনের কারণে নাকি পশ্চিমবঙ্গ আজ সমগ্ৰ ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত। এ নিয়ে এখনো চরম বিতর্ক আলোচনা চলমান।

কারাগারে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাঁকে ভুল ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল বলে প্রকাশ। এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র ছিল বলে রাজনৈতিক মহলের অনুমান। তাঁর মৃত্যু বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি কেন,এটাও রহস্যজনক। ২০০৪ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন,এটা ছিল নেহেরুর চক্রান্ত।

উল্লেখ্য, শ্যামাপ্রসাদ কেন্দ্রীয় পরিষদ নির্বাচন Calcutta Suburbs থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী সফরে কাঁচরাপাড়া ও হালিশহরে এসেছিলেন। দিনটি ছিল ২৫শে নভেম্বর ১৯৪৫। তাঁকে বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হয় সেদিন।

১৯৫২ সাল প্রথম সাধারণ নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্রের হিন্দু মহাসভার প্রার্থী দুঁদে আইনজীবী এন.সি চ্যাটার্জীর সমর্থনে সার্কাস ময়দানে বক্তব্য রেখেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তখন বীজপুর হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। উল্লেখ্য এন সি চ্যাটার্জী ছিলেন শেষ জীবনে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত বামপন্থী চিন্তামনস্ক প্রয়াত স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জীর পিতা।

২৮শে জুলাই ১৯৫১ শ্যামাপ্রসাদ এসেছিলেন কাঁচরাপাড়া মিউনিসিপ্যাল পলিটেকনিক হাই স্কুলের পুরস্কার বিতরণী সভায়।

প্রসঙ্গত, ‘গৌরাঙ্গদেব ও কাঞ্চন পল্লী’র লেখক সতীশ চন্দ্র দে থাকতেন কাঞ্চনপল্লীর মাঝেরপাড়া গ্ৰামে। তাঁরই প্রতিবেশী ছিলেন শিক্ষাবিদ সতীশ চন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সম্পর্কে তিনি ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ভগ্নিপতি। অর্থাৎ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পিসেমশাই।

সতীশ চন্দ্র দে তাঁর বইতে লিখেছেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উক্তিতে,’তোমাদের পালকিতে চড়িয়া আমি স্টেশান(কাঁচরাপাড়া) হইতে সতীশের (ভগ্নিপতি) বাটীতে গিয়াছি এবং পুনরায় স্টেশানে আসিয়াছি।’ উল্লেখ্য কাঁচরাপাড়া স্টেশনে তখন পালকির স্ট্যান্ড ছিল। কাঁচরাপাড়ায় শুকিয়ে যাওয়া যমুনা নদীর উত্তর খাতে একটি গ্রাম ছিল। নাম ছিল গুস্তিয়াগ্রাম। সেখানে পালকি বাহকদের বসতি ছিল।

দেখা যাচ্ছে যে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিভিন্নভাবে কাঁচরাপাড়ার যোগসূত্র রয়ে গিয়েছে।

ইতিহাসে আলোচিত কত মানুষ যে কাঁচরাপাড়ায় এসেছেন তাও এই অঞ্চলের এক ইতিহাস।

ছবিঃ কাঁচরাপাড়া মিউনিসিপ্যাল পলিটেকনিক হাই স্কুলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও রাসবিহারী শাস্ত্রী সহ অন্যান্য বুধজন।

চিত্রগ্রাহকঃ গোপাল রায়, সানরাইজ স্টুডিও,ঘটক রোড।