আমাদের বহুপরিচিত গাঙ্গেয় তীর। পার ধরে কত চটকল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সবই শতাব্দী প্রাচীন।
৫ জানুয়ারি,’২২ নিউ ইয়ারের শুরুতে বন্ধ হয়ে গেল নৈহাটি জুট মিল। খবরের কাগজে কোন খবর নেই। ৪ হাজার শ্রমিক পরিবারের প্রায় ১২ হাজার মানুষের অবয়বে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। মুখগুলো ক্রমাগত শুকনো হয়ে তাকিয়ে রইল মহাকাশের দিকে!

আজকের দিনের কবিতা
তমাল সাহা

এক)
স্তব্ধতা

মায়ের দগ্ধ নাভিকুণ্ড পোড়ামাটির মালসায় রেখে মাটি দিয়ে মুড়ে
শ্রমিকটি নেমে গেল গাঙ্গেয় সলিলে।
উদোম গা তার
শীতের কুয়াশার ভেতর একটি নক্ষত্র গেল ঝরে।
শ্রমিকটির শীত লাগেনা
তার গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত বসন্ত বলে কোনো ঋতু নেই।

বাপ তার জুটমিলে কামগার ছিল
সে ছিল বদলি শ্রমিক
পাট বাছাই করা ছিল তার কাজ।
ফলত কাঁচা পাটের গন্ধ লেগে থাকতো তার শরীরে।
মায়ের মৃত্যুর আগের দিন মিল বন্ধ হয়ে গেল।
সে বলে, মিল বন্ধ হয়ে গেল ঠিক নয়,
কাম মানে পেটের দানাপানি বন্ধ হয়ে গেল।

সে ভাবে কোলাহল থেমে গেলে
জড় ও জীব সবাই শান্ত হয়ে যায়।
জুটমিলে এখন আর ধুলোঝুলিমাখা মানুষের পদশব্দ নেই
মায়ের জীবনেরও আর হৈচৈ নেই।
মা-জুটমিল এখন স্তব্ধতার গান গায়
মিল ও মা তার চোখে এখন একাকার–
ছবি হয়ে ভাসে।

সে ভাবে নদীর একটি দিশা থাকে
নদীর একটি গন্তব্য থাকে
কিন্তু মিল গেটে বিশাল তালা ঝোলে
তার প্রিয় কারখানার ভবিষ্যত কি?
নৈঃশব্দ্য খেলা করে নিঃশব্দে মাথার ভেতরে।

তার এই ছোট্ট জীবন-নদী কি
কোনোদিন মহাসমুদ্রের দিকে যাবে!

দুই)
বুকে চাপা কথা

নৈহাটি জুট মিল বন্ধ হয়ে গেল
কাগজে তেমন খবর নেই
জুট মিল বন্ধ তা নিয়ে কবিতা লেখা যায় না
ছন্দোহীন জীবন নিয়ে ছন্দের কবিতা হয় না।

এই জুটমিল বিষয়টি ভালো জানে সমরেশদা– সমরেশ বসু
আর জোৎস্নাদা– জোৎস্নাময় ঘোষ
আজ তাদের কথা মনে পড়লো।

সমরেশদা জুটমিলে কাজ জুটিয়েছিল
কমিউনিস্ট পার্টির মেম্বার ছিল! আর কি?
জগদ্দল নামে একটা উপন্যাস লিখেছিল।
তবে জোৎস্নাদা মাস্টারমশাই ছিল
পার্টির মেম্বার ছিল কিনা জানা নেই।
তবে বামপন্থী ছিল। আর?
জগদল নামে একটা নাটক লিখেছিল।

জগদ্দল বা জগদল সে যে নামেই হোক
মোদ্দাকথা এর মানে চটকলের জীবন
মানে জুটমিলের শ্রমজীবী লোক।

চট করে বন্ধ হয় যে কল, সেটাই চটকল
জীবনের গরমিল যেখানে, যেখানে জীবনের জট সেটাই জুটমিল–

একথা একদিন
এক কামগার কবি আমাকে বলেছিল…