অবতক খবর, উত্তর ২৪ পরগণাঃ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র‌ুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি?”ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু ঝরা এ ফেব্র‌ুয়ারি আমি কি ভুলতে পারি?আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র‌ুয়ারিআমি কি ভুলতে পারি শনিবার  সকাল থেকেই গান, আবৃত্তি আর দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী রাজনীতিবিদ ও সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষের সমরোহে মুখর হয়ে ওঠে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তে ।

অমর একুশের অমর সুরের সঙ্গে দু’পারের মঞ্চ থেকে ভেসে আসা “একই আকাশ, একই বাতাস/এক হৃদয়ে একই তো শ্বাস” গানের সুর যেন বেঁধে রাখে সবাইকে। স্বাধীনতা পেলাম মাতৃভূমিকে ত্রিখন্ডিত করে। দেশে দেশে সংবিধান তৈরী হল, শরীরের অংশ হয়ে গেল প্রতিবেশী দেশ! ইংরেজ নিদানকে ও তৎকালীন দেশীয় নেতৃবৃন্দের প্রবল ইচ্ছায় বেশিরভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মূল অঞ্চল হল ভারত, আর তার দুই পাশে অধিকাংশ মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত বসতি অঞ্চল হল যথাক্রমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান। শাসনতান্ত্রিক নিয়মে ভারত বিভক্ত হল বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে – যেখানে মাতৃভাষা পেল প্রাধান্য।

অন্যদিকে, পশ্চিমে পাকিস্তানের ঊর্দুভাষীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে উপনিবেশবাদী ভাবধারায় পূর্ব পাকিস্তানকে করায়ত্ত করতে চাইল ঐ ভাষাকে আশ্রয় করেই।পূর্ববঙ্গের বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায় মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্যুত এক অনাথ শিশুর মতো- যার শেষ সম্বল বলতে মাতৃভাষা – ব্যাথা-বেদনায়, বিষাদ ও অশ্রুতে। সেই সম্বলটুকু হারানোর আশঙ্কায় মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা, স্বীকৃতি শুরু হয়েছিল ভাষা বিক্ষোভ ১৯৪৭’র নভেম্বর-ডিসেম্বরেই। তারপর, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র‌ুয়ারি (বাংলা ৮ই ফাল্গ‌ুন ১৩৫৮) অধুনা বাংলাদেশের সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, যার স্বীকৃতি পরবর্তীকালে পথ দেখালো সারা পৃথিবীকে, হয়ে রইল এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা, ইউনেস্কো ২১শে ফেব্র‌ুয়ারি “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসাবে স্বীকৃতি দিল। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে এই দিনটি পালিত হচ্ছে৷
আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস ।  বাংলা ভাষা রক্ষায় কেবলমাত্র বাংলাদেশের মানুষই নন, পরবর্তী সময়ে ১৯৬১ সালের ১৯শে মে’তে অসমের শিলচর শহরে অসম রাইফেলসের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১১ জন ভাষাবিপ্লবী। যার পরিণামে ঐ রাজ্যে এখন বাংলা হয় দ্বিতীয় রাজ্য ভাষা।

পৃথিবীতে এমন প্রায় ৫১ টি ভাষা আছে যেগুলিতে মাত্র ১জন করে ব্যবহারকারী আছেন। এই অবস্থায়, ১৯৯৯ ভাষাতেই রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন দুই দেশের দুই জাতীয় সংগীত, “জনগণমন অধিনায়ক জয় হে….” আর “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি….”।

২০০২ সালে ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার ‘ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা-পদ্মা ভাষা ও মৈত্রী সমিতির’ উদ্যোগে সীমান্তবর্তী প্রায় ২৫টি সংগঠন পেট্রাপোল-বেনাপোলের এই মিলন মেলার সূচনা করে।
ওপার বাংলার বেনাপোল পৌরসভা আর এপারের বনগাঁ বেনাপোলের শূন্য রেখা থেকে মাএ ২০০ মিটারের দূরত্বে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশে মঞ্চ’। ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীরা এই দু’ই মঞ্চে বসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন৷কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও কয়েক ঘণ্টার জন্য যেন উধাও হয়ে যায় সীমান্তের কাঁটাতার; দুই বাংলার মানুষ সীমান্তে মিলিত হয় আলিঙ্গনে; মেতে ওঠে আড্ডায়-স্মৃতিচারণে।

এদিন সকালে আয়োজকরা আগে থেকেই নিজ নিজ ভূখণ্ডে অপেক্ষায় থাকেন ঘড়িতে যখন সকাল ৯টা, তখন সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে পা রাখবেন পশ্চিমবঙ্গের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, কবি-শিল্পী-সাংবাদিক সাহিত্যিকদের একটি প্রতিনিধিদল।
ওপার বাংলার ৮৫ যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন ,

বিএসএফ সূত্রে জানা যায় অন্যান্য বছরের মতো এবারও ভারতের বেনাপোল সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। তবে মানুষের চাপ সামলানো ও নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবার আলাদা মঞ্চে হচ্ছে দুই বাংলার অনুষ্ঠান।

বনগাঁ ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেনন, সকাল সাড়ে ৯টার সময় পেট্রাপোল- বেনাপোল চেকপোস্ট নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন এপার বাংলার খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক৷ তিনি আরও বলেন,‘দুই বাংলার ভাষাপ্রেমী মানুষের চাপ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবার আলাদা আলাদা মঞ্চে একুশে উদযাপিত হচ্ছে । পেট্রাপোল চেকপোস্টে জায়গা অনেক কম। মানুষের চাপ থাকে অনেক বেশি। ৷