খুন আগুন পরাস্ত হয়। মায়েদের প্রত্যয়ী জেদকে ভয় পায়। নারীদিবসকে সামনে রেখে মায়েরা আরো তীব্রতর লড়াইয়ে যায়….

অন্য শাহীনবাগ
তমাল সাহা

মায়েরা কি মরে? মরে না।
মায়েরা গরল পান করে অমৃত উগরে দেয়।
মায়েরা মরলে মায়ের গর্ভে কিভাবে প্রজন্মের জন্ম হয়!
জমি ঊষর হলে কি বিছন হয়?
ফসল জন্মায়?
মায়েরা মরেনা ক্রমাগত বেড়ে যায়।
অন্য শপথে মা আমার অনন্যা হয়ে উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

বিশ্ব নারী দিবসে নারীদের শপথ—
আশি দিন পার।
প্রয়োজনে পার করে দেব আট হাজার দিন,
এমনই অঙ্গীকার।

রাষ্ট্র গুজব ছড়ায়, চালায় অপপ্রচার।
শাহীনবাগ নাকি শূন্য ফাঁকা।
আমি তো দেখি রক্তস্রোত উপেক্ষা করে
মায়েরা আরো হাজির হাজার হাজার।

দাদি বলে, নারী দিবস একদিন হয় নাকি?
প্রতিদিনই তো নারীদের দিবস।
বাধা-বিপত্তিকে পদদলিত করে আমাদের আয়োজন জীবনের উৎসব।

দুদিন ধরে বৃষ্টি।
দাদি বলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগও আমাদের পরীক্ষা করে নাকি?
পরীক্ষা করে কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেয়,
আমরা সাচ্চা লড়াকু নাকি মেকি,
নাকি আমাদের লড়াইয়ে আছে কোনো বুজরুকি?

বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত রাস্তা,
কদিন আগে রক্তে ছিল ভেজা।
মায়েরা দমেনি,
চৌকি পেতে অবস্হানে বসে পড়েছে সোজা।

আজ ছিল নারী দিবস। বিশেষ আয়োজন।
আমরাও আছি,
মায়েরা নয় জনহীন, নির্জন।
পড়ুয়ারা শামিল, কুর্নিশ জানায় মায়েদের,
রে মা, তোদের কি করে ভুলি!
শিল্পীদের হাতে তুলি, শাহীনবাগে বসে আছে প্রস্ফুটিত লড়াকু মাতৃ মুখগুলি। ‌

শাহীনবাগ যাচ্ছে অন্য মাত্রায়।
লাইব্রেরি তৈরি হয়েছে সেখানে।
জামিয়া, আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে
পুলিশি বর্বরতায় ভাস্বর চিত্র প্রদর্শনী।
চলছে বুধজনের ভাষণ— দেশের ইতিহাস,
সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের প্রতিধ্বনি।
মায়েরা উল্লাসে উচ্চারণ করে,
বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী।

দুঃশাসনীয় উল্লাস এখানে সংঘর্ষ ও সৃজনের মাত্রা পায়।
আমি বহুদূরে থাকি,
প্রণাম রাখি মায়েদের বলিষ্ঠ পায়ের পাতায়।

মায়েরা বলে আমরা আশফাকউল্লার মা,
আমরা ভগৎ সিং-এর মা,
আমরা ক্ষুদিরামের মা।
সকলেই জানে, বিশ্ব জানে,
আমার রাষ্ট্র শুধু জানে না।